খালেদার মুক্তির দাবিতে অলির ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’
২৭ জুন ২০১৯ ১৯:১১
ঢাকা: কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১৮ দফা দাবি আদায়ে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ আত্মপ্রকাশ করেছে। এ মঞ্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজি এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ।
আরও পড়ুন- জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় খালেদার মুক্তির প্ল্যাটফর্ম শিগগিরই!
এ সময় তার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি তাসমিয়া প্রধান, ন্যাশনাল মুভমেন্টের চেয়ারম্যান মুহিব খান, খেলাফত মজিলিসের যুগ্ম মহাসচিব আহমেদ উল্লাহ কাসেমী, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম।
দর্শক সারিতে ছিলেন নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি, বিএনপি ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দেওয়া ইসলামাইল হোসেন বেঙ্গলসহ কয়েকশ নেতাকর্মী ও সমর্থক।
এলডিপি সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই উদ্যোগের পেছন থেকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে জামায়াত। তবে কৌশলগত কারণে তাদের কোনো শীর্ষ নেতা সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত হননি। কিন্তু দর্শক সারিতে যাদের দেখা গেছে, তাদের অনেকেই জামায়াতের কর্মী-সমর্থক। আর খেলাফত মজলিসের মহাসচিব শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. আহমেদ আব্দুল কাদের নিজে না এসে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রণাঙ্গনে নিজের ভূমিকার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সখ্য’র কথা তুলে ধরে নিজেকে তার ছায়াসঙ্গী হিসেবে উল্লেখ করেন অলি আহমদ।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৯ সালে নভেম্বর মাসে জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৩ বছর চাকরি অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করি এবং ১৯৮০ সালে এমপি নির্বাচিত হই। ১৯৮১ সালের পর থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সবসময় খালেদা জিয়ার পাশে ছিলাম।’
আরও পড়ুন- জামায়াতকে সাইড বেঞ্চে রেখে বৃহত্তর ঐক্য’র চিন্তা বিএনপির
‘সেই নেত্রী আজ কারাগারে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া যদি মুক্ত হয়, একনায়কতন্ত্র থেকে যদি দেশ মুক্ত হয়, then the nation will be free,’— বলেন অলি আহমদ।
‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আশা করি জাতীয়তাবাদী সকল শক্তি আমাদে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসবে। বিশেষভাবে গণতন্ত্রপ্রেমী ও বাংলাদেশপ্রেমী সকল রাজনৈতিক দল, সকল নাগরিক, সামাজিক সংগঠন, প্রবীণ ও তরুণরা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।’
জাতীয় মুক্তিমঞ্চের সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে আশ্বাস দিয়ে অলি বলেন, ‘সব ধর্ম ও রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল থাকব। এ ছাড়াও দেশে বসবাসরত সকল ছোট-বড় নৃগোষ্ঠী যেন সমান সুযোগ, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে, তা আমরা নিশ্চিত করব। জাতিকে বিভক্ত নয়, বরং ঐক্যবদ্ধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ পরায়ণতা, দলীয়করণ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে নিজেদের বিরত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা কখনও কাউকে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেবো না। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হব না।’
অলি আহমদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি প্রকাশ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা, জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন, দেশের শিক্ষিত যুবকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ, গুম ও খুন বন্ধের পদক্ষেপ, ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হয়রানি বন্ধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ভেজাল ওষুধ বন্ধ, খাদ্যে ভেজালকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা।
এসব দাবি আদায়ে এই সংবাদ সম্মেলনই শেষ, নাকি আরও কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, ‘এটা কেবল শুরু। আপনারা অপেক্ষা করুন, কর্মসূচি আসবে।’
এই জোটে কারা কারা থাকবে?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পাশে যারা বসে আছেন, তারা সবাই থাকবেন এই জোটে। এ ছাড়া সব দেশপ্রেমী শক্তি আমাদের সঙ্গে শরিক হতে পারবেন।’
বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে বলেই কি আপনি নতুন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করতে চাচ্ছেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে ব্যর্থ হয়েছে আর কে সফল হয়েছে, সে বিষয়টি নিয়ে আজ কোনো কথা হবে না। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছি।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
এলডিপি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ কর্নেল অলি খালেদা জিয়ার মুক্তি গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধার’ জাতীয় মুক্তিমঞ্চ