চীনের ঋণের ফাঁদ বিষয়ে সতর্ক আছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২৮ জুন ২০১৯ ২৩:৪৩
ঢাকা: ‘দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চীনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। চীনের ঋণের ফাঁদে যেন পড়তে না হয় এজন্য আমরা সতর্ক আছি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন শুক্রবার (২৮ জুন) এক প্রেস কনফারেন্সে এই তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর উপলক্ষে এই প্রেস কনফারেন্সটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে ঋণের শর্তাবলির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ যে, পাঁচ প্রকল্পে ঋণের সুদহার ২ শতাংশ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরে ঋণ সংক্রান্ত যেসকল চুক্তি হবে সেগুলোর সুদহার বেড়ে হচ্ছে ৩ শতাংশ। এর সঙ্গে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ফি এবং শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে।
চীন সাধারণত দুই প্রকার ঋণ দেয়। এর একটি হলো- গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল)। অন্যটি প্রিফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি)। উভয় ঋণের সুদহার এর আগে ধরা ছিল ২ শতাংশ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে ঋণ চুক্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দাবি করে চীন। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ( ইআরডি) সঙ্গে আলোচনা করে অবশেষে জিসিএল ঋণে সুদহার ২ শতাংশ এবং পিবিসি ঋণের সুদহার বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অর্থনীতিবদিরা বলছেন, চীন দক্ষিণ এশিয়ায় ঋণের ফাঁদ পেতেছে। যা এই অঞ্চলকে চীনের জিম্মায় নিতে সুবিধা হবে আর এই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে শুক্রবারের (২৮ জুন) প্রেস কনফারেন্সে গণমাধ্যমকর্মীরা চীনের ঋণের ফাদ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেই চীনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। আমরা যাতে চীনের ঋণের ফাঁদে না পড়ি সেই বিষয়ে সতর্ক রয়েছি। এর আগেও আমরা চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করেছি কিন্তু সবগুলো ঋণ নেইনি। আসন্ন প্রধানমন্ত্রীর সফরে কতো টাকার ঋণ চুক্তি হবে সেই পরিমাণ এখনো ঠিক হয়নি।’
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীনের ভূমিকা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যূতে চীন মিয়ানমারকে মদদ দিচ্ছে এটা বিশ্বাস করিনা। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের যেমন সু-সম্পর্ক আছে তেমন বাংলাদেশের সঙ্গেও সু-সম্পর্ক রয়েছে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যূতে চীনের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। আর চীন চায় এই সঙ্কটটি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যূতে আলোচনা করবেন। চীনকে বার্তা দিবেন যে রোহিঙ্গা ইস্যূ জিইয়ে থাকলে এই অঞ্চলে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে, ব্যহত হবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে। এসব বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই সঙ্কট সমাধানে চীনকে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে বলবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন চীন সফরে শি জিংপিনের গত ২০১৬ সালে ঢাকা সফরের যৌথ ঘোষণা নিয়েও আলাপ হবে। ওই ঘোষণায় দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি হয়েছে তা চলমান আছে। ওইসব চুক্তির অনেক কাজ চলছে। নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, রেল লাইন স্থাপন এসব প্রকল্প চলমান রয়েছে। দেশের স্বার্থে ঢাকা ব্যালান্স ডিপ্লোমেসি চালাচ্ছে। যেমন চীনের বেল্ট এন রোড ইস্যূতে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম যোগ দেয় এবং তা দেশে শুনে ও দেশের স্বার্থ নিশ্চিত করে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সরকারের আমন্ত্রণে আগামী ১ থেকে ৫ জুলাই চীন সফর করবেন। এই সফরে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উন্নয়নে চীনের সঙ্গে ৮টি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমাঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করা হবে। এসব চুক্তি ও সমাঝোতা স্বারকের মধ্যে ঋণ চুক্তিও রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমএইচ