লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় পানি সংকটে গ্রাহকরা
২৯ জুন ২০১৯ ১২:১৯
লক্ষ্মীপুর: জেলার পৌরসভার ৪০ হাজার বাসিন্দা পানির সংকটে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গত এপ্রিল মাস থেকে বিশুদ্ধ পানির তীব্র-সংকট চলছে। গ্রাহকদের চাহিদার অর্ধেক পানিও সরবরাহ করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর কর পরিশোধ করেও নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না পৌরবাসী। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে পৌরবাসীর মধ্যে।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা একটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা। এখানে প্রতি বছর পৌর কর বাড়লেও নাগরিক সুবিধা সে হারে তেমন বাড়ে না। বর্তমানে মেয়র হিসেবে তৃতীয় বারের মত দায়িত্ব পালন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের। তিনবার মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পরও কষ্ট লাঘবে কাজ না করায় সুবিধা বঞ্চিত পৌর নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
পৌরসভার পানি শাখার ইঞ্জিনিয়ার মো. সামছুদ্দিন জানান, লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় প্রায় ছয় হাজার পানির গ্রাহক ও হাজারেরও বেশি উপ সংযোগ রয়েছে। পৌরবাসীর চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ৯০ লাখ লিটারের বেশি পানির প্রয়োজন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে ৪৫ লাখ লিটার পানি গ্রাহকদের সরবরাহ করা যাচ্ছে। তিনটি উচ্চ জলাধারে পাম্প দিয়ে এ পানি উত্তোলন করা হয়। কিন্তু বিদ্যুতের কম ভোল্টেজের কারণে চাহিদামত পানি উঠানো যাচ্ছে না। সন্ধা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত টানা কম ভোল্টেজ থাকে। ১২টার পর মাঝে মধ্যে ভোল্টেজ পাওয়া যায়। এ জন্যেও উচ্চ জলাধারে পানি উত্তোলন ব্যাহত হয়।
পৌরসভার বাঞ্চানগর গ্রামের ল’ইয়ার্স কলোনীর শিক্ষক মো. তারেক হোসেন জানান, চাহিদা মোতাবেক পানি সরবরাহ না থাকায় তিনি বাসায় গভীর নলকূপ বসিয়েছেন। এভাবে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানির কষ্ট লাঘবে অসংখ্য গ্রাহক বর্তমানে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লামচরী এলাকার এক গ্রাহক জানান, মাসের শেষে পানির বিল পরিশোধ করলেও ঠিক মত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তার এক ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে চলে গেছেন।
শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, ওই এলাকায়ও পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি গ্রাহকরা ঠিক মত পাচ্ছে না।
দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের গৃহিনী সামছুন নাহার জানান, সমতা কলোনীতে পানির বিল দেওয়া হলেও দীর্ঘ দিন থেকে তারা পানির সংকটে ভূগছেন। পানি আসলেও অনেক সময় অল্প সময়ের মধ্যে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকমত পানি না পাওয়ায় রান্না-বান্না করতে নলকূপের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি মাহাবুব মোহাম্মদ আলী জানান, শহরের অধিকাংশ পুকুর ভরাট করার কারণে পৌরসভার সরবরাহ করা পানির ওপরই তাঁদের নির্ভরশীল থাকতে হয়। সারা দিন পানির সংকটের কারণে তাঁরা অতিষ্ঠ।
পৌরসভার সচিব মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিদ্যুতের কম ভোল্টেজের কারণে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গ্রাহকদের পানির সমস্যা সমাধানের জন্য ২৬ কোটি টাকা খরচে ১ লাখ ৫০ হাজার গ্যালন পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে আরও ২ হাজার নতুন গ্রাহক পানির সুবিধা পাবেন। তখন পানির সংকট অনেকটা কমে যাবে।
সারাবাংলা/জেএএম