বারান্দায় ঝুলন্ত বাগান, আসছে গাছ বিক্রির ওয়েবসাইট
৩০ জুন ২০১৯ ০৯:০৯
ঢাকা: কংক্রিটের নগরীতে এখন শুধু ছাদে বাগান নয়, বারান্দা কিংবা ব্যালকুনিতেও হবে ঝুলন্ত বাগান। স্বল্প স্থান ব্যবহার করে ঝুলিয়ে রাখা একটি বালতিতে একই সঙ্গে তিনটি ফসল ফলানো যাবে। সবজি জাতীয় ওই ফসল থেকে শুধু ফলনই নয়, শহরে যাদের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাট কিংবা প্লট রয়েছে তারাও পাবেন সবুজের সমারোহ।
জাতীয় বৃক্ষমেলায় ঝুলন্ত এই কৃষি পদ্ধতি প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করছে ‘লাইফ টু ন্যাচার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর ছাদ বাগান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে নজর কেড়েছে।
এছাড়া শিগগিরই গাছ বিক্রি থেকে শুরু করে রোপণ পরবর্তী সব সেবা ও উপকরণ পাওয়া যাবে অনলাইনেই। গাছ বিক্রি ও সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে ‘আবাদী’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান দ্রুতই বাজারে নিয়ে আসবে ‘তরুলতা ডটকম’ নামক ই-কর্মাস ওয়েবসাইট। দেশের ইতিহাসে এটিই হবে গাছ বিক্রি সংক্রান্ত প্রথম ই-কমার্স সাইট। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর এমনসব তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে গাছ বিক্রি সম্পর্কেও পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। মেলায় এরই মধ্যে লাখ টাকা দামেরও গাছ বিক্রি হয়েছে। আর বৃক্ষমেলার প্রতিটি স্টলেই কমবেশি দর্শনার্থী রয়েছে। আগতদের বেশিরভাগই প্রিয় কোন গাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন। বিক্রেতারাও বেচাকেনায় বেশ সন্তুষ্ট।
শনিবার (২৯ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাণিজ্যমেলার মাঠে মাসব্যাপী চলমান বৃক্ষমেলার দশম দিনে মেলা ঘুরে এমন তথ্য আর চিত্র পাওয়া গেছে। আয়োজকরা জানান, মেলায় এবার সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১০২ টি স্টল অংশ নিয়েছে। বনজ, ফলদ ও ওষুধি মিলে অন্তত দেড়শ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিক্রিত চারার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ টি। এরই মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকার গাছ বিক্রি হয়েছে।
মেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে লাইফ টু ন্যাচারের স্টল। সেখানেই দেখা গেল ঝুলন্ত কৃষির প্রদর্শনী। কথা হলে প্রতিষ্ঠানটির কো-অর্ডিনেটর হোসনে আরা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ৪ বছরের সফল পরীক্ষার পর প্রথমবারের মতো মেলায় আমরা ঝুলন্ত কৃষি পদ্ধতি প্রদর্শন করছি। এতে একটি বালতি থাকবে। বালতিটি হবে স্টিললেস। যেটি ১০ বছরেও ঝং ধরবে না। নষ্টও হবে না। এই বালতিতে তিনটি ফসল ফলানো যাবে। যেমন বালতির নিচ দিকে ঝুলে থাকবে মিষ্টি আলু শাক। উপরের অংশ অর্থাৎ বালতির ভেতরে রাখা মাটিতে হবে মিষ্টি আলুর ফলন। আর ওই মাটির উপরের অংশে ঢেড়শ গাছ রোপণ করা হবে। আবার এতে বাদামও রোপণ করা যাবে। বালতিটি ঝুলাতে হবে মাচা কিংবা যে কোনো র্যালিংয়ে। শীতকালে এতে টমেটো করে আমরা ব্যাপক ফলন পেয়েছি। আর মিষ্টি আলু যেহেতু সারাবছর হয় তাই এখন তা প্রদর্শন করছি। প্রতিষ্ঠানটি থেকে শুধু বালতি কিনতে খরচ হবে সাড়ে তিনশ টাকা। আর চারাসহ নিতে চাইলে খরচ পড়বে সাড়ে চারশ টাকা।
হোসনে আরা জানান, শহরে যারা থাকেন তাদের সবার ফ্ল্যাটে ছাদ নেই। কিংবা ছাদে অংশীদারিত্ব থাকলেও তা খুবই স্বল্প। ফলে সবার পক্ষে ছাদে বাগান করা হয়ে উঠে না। যাদের বাগান করা শখ সহজেই তারা এ পদ্ধিততে বাগান করতে পারবেন।
২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে লাইফ টু ন্যাচার। প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি ছাড়াও বাগানিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ছাদ বাগান করতে এখন পর্যন্ত ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর যারা প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের একটি অ্যাপ সরবরাহ করা হয়। সেই অ্যাপে বাগান করার সকল তথ্য সংযুক্ত রয়েছে। বাগান পরিস্থিতির আপডেট জেনে প্রতিমুহূর্তেই সেবা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের বৃক্ষমেলায় তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তক ছাদ বাগানের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পুরস্কারও পায়।
এদিকে, আবাদী নামক একটি প্রতিষ্ঠান তরুলতা ডটকম নামে ই-কমার্স সাইট নিয়ে আসছে শিগগিরই। এতে গাছ, গাছের সার ও রোপণ পরবর্তী বিভিন্ন সেবা ঘরে বসেই পাওয়া যাবে।
আবাদীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালমা বানু সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য রয়েছে আমরা অনলাইনে গাছ সেল করব। অর্থাৎ হোম ডেলিভারি দিবো। গ্রাহকদের গাছ, সার ও বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করা হবে। আমরা শুধু বিভিন্ন উপকরণ বিক্রিই করব না, সেবাও দিয়ে থাকব। বাগানের কোন পর্যায়ে কী ধরনের সেবা দরকার, কখন কী করতে হবে, অনলাইনেই আমরা সেই সেবা দেব।
তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থীদের সাড়া ভালোই। ওয়েবসাইট শুনে অনেকে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত অনেক পেইজ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ওয়েবসাইট নেই। অর্থাৎ আমরাই প্রথম ই-কমার্সে আসতে যাচ্ছি। আগামী এক মাস অর্থাৎ মেলার মধ্যেই আমরা তা চালু করতে পারবো বলে আশা করছি।’
মেলায় এ কে এম সাইফুল্লাহ তার দুই শিশু সন্তান তাসনিম নিগার ও তাসনুভা নিগারকে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি অপরিচিত সব গাছের সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেলেন।
সারাবাংলাকে সাইফুল্লাহ বলেন, ‘শহরে সবুজ নেই। তাপমাত্রা বাড়ছে। মেলার এই সবুজ পরিবেশে শিশুরা কিছুটা হলেও সতেজ হচ্ছে। সাইফুল্লাহর মতো অনেক অভিভাবককেই তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসতে দেখা গেছে।’
মুক্তাগাছার বনরূপা নার্সারির কর্মী দেলোয়ার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিক্রি গত বছরের মতোই। দর্শনার্থীরা আসছেন। শেষ দিকে হয়ত আরও বাড়বে।’
নিজের দোকানের স্বাতন্ত্র্য জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার আমরা প্রথমবারের মতো ভিয়েতনামের মালটা ও নিউজিল্যান্ডের কিউইউ ফলের চারা নিয়ে এসেছি।’
সৌদি খেজুর নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রোর প্রোপাইটর আব্দুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনেই টিস্যু কালচার করা সৌদির খেজুর গাছের চারা ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। খেজুর গাছের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি।’
আব্দুল হালিম বলেন, ‘সঠিক উপায়ে এক বিঘা জমিতে খেজুর চাষ করতে পারলে যে কোন মানুষের দিন ঘুরে যেতে পারে। তবে খেজুর গাছের সঙ্গে ড্রাগন, মলটা, জাবটিকাবা, লটকন এবং চারদিকে সেতুচন্দন বা আগরআতর গাছ রোপণ করতে হবে। তিন লাখ টাকা খরচ করে এতে দুই বছরে কোটিপতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নিজের জমি থাকতে হবে।’
দেশে সৌদি খেজুরের উৎপাদন কেমন জানতে চাইলে এই নার্সারীর মালিক বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে নেওয়া গাছগুলোতে খেজুর আসছে। তবে উৎপাদিত খেজুর এখনও ব্যাপকভাবে বাজারে আসেনি। ব্যাপকভাবে আসতে আরও দুই থেকে তিন বছর লাগবে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে