বরগুনার ‘০০৭ গ্রুপে’র সাগর পুলিশে চাকরি পাচ্ছে!
৩০ জুন ২০১৯ ১২:৪৬
বরগুনা: বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত আলোচিত ‘০০৭ গ্রুপে’র সদস্য মো. সাগর পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। রোববার (৩০ জুন) বরগুনা পুলিশ লাইনে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই চূড়ান্ত হবে তার নিয়োগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি এ ঘটনা সত্য হয়, তাহলে বরগুনা জেলা পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, মো. সাগর ০০৭ গ্রুপে যুক্ত থাকার কথা নিজেই স্বীকার করেছেন। যদিও তিনি বলছেন, তাকে জোর করে এই গ্রুপে যোগ করা হয়েছে। তাছাড়া রিফাত হত্যার সময় তিনি বরগুনা কলেজ এলাকায় উপস্থিত ছিলেন না বলেও দাবি করেছেন।
গত বুধবার (২৬ জুন) সকালে বরগুনা কলেজের সামনে চার-পাঁচ জন দুর্বৃত্তের একটি দল প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাতকে। রিফাতের পরিবারের অভিযোগ, নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ডের নামের সঙ্গে মিলিয়ে ০০৭ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ চালান নয়ন। নিজের নামের সঙ্গেও তিনি জেমস বন্ডের নাম থেকে বন্ড শব্দটি যোগ করেছেন। এই গ্রুপেই রিফাত হত্যার পরিকল্পনা হয় মঙ্গলবার (২৬ জুন) রাতে। কেবল মেসেঞ্জারে নয়, বাস্তবেও ০০৭ নামে একটি গ্যাং গ্রুপ পরিচালনা করেন নয়ন। দীর্ঘদিন ধরে বরগুনার কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আসছেন তারা।
এরই মধ্যে ০০৭ গ্রুপে রিফাত হত্যার পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। সেই গ্রুপের কথপোকথনের স্ক্রিনশটও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। সেসব কথোপকথনেই দেখা যায়, সাগর নামে একজন রয়েছেন সেই গ্রুপে।
এদিকে, বরগুনায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের তালিকায় রয়েছেন মো. সাগর নামে একজন। পরীক্ষায় তার রোল ছিল ১০৮, ৪০ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় ১৮তম স্থান পেয়েছেন তিনি। আজ রোববার বরগুনা পুলিশ লাইনে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সাগর বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল লতিফের ছেলে। বরগুনা পৌরসভার পশ্চিম আমতলা পাড় সড়কে তাদের বাড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কনস্টেবল পদে মেধাতালিকায় ১৮তম স্থানে থাকা এই মো. সাগরই ০০৭ মেসেঞ্জার গ্রুপে থাকা সাগর। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন সে তথ্য। যদিও তার দাবি, রিফাত হত্যার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
রিফাত হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে ০০৭ মেসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথনে দেখা যায়, রিফাতকে হত্যার দিন সকাল ৮টা ৬ মিনিটে রিফাত হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী (নয়ন বন্ডের ০০৭ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত) গ্রুপে লেখেন, ‘০০৭-এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই।’ এর উত্তরে ‘Mohammad’ নামে একজন জানতে চান, ‘কয়টায়?’ আর ফরাজীর ওই নির্দেশনায় সাগর উপস্থিত থাকার সম্মতি জানান, বিজয়সূচক ‘ভি’ (v) প্রতীকও দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. সাগর মোবাইল ফোনে বলেন, আমি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি বাছাই পর্বে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আমি ২২ তারিখে বরগুনা এসেছি। আর রিফাতের ওপর হামলার সময় আমি কলেজে ছিলাম না। ওই সময় আমি আমার ভাইভা পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে গিয়েছিলাম। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম আমি।
নয়ন বন্ড ও তার প্রধান সহযোগী রিফাত ফরাজীর সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাগর বলেন, দুই বছর আগে আমি বরগুনায় এসেছি। এর মধ্যে আমি দুই মাস বরগুনা থেকেছি। বাকি সময় ঢাকাতেই থেকেছি। বরগুনায় আমি আসলে কাউকে চিনতাম না। আমাকে বলছে, এখানে থাকতে হলে নয়ন বন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই চলতে হবে।
০০৭ গ্রুপে যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে সাগর বলেন, আমি এই এলাকায় নতুন এসেছি। রিফাত ও তার সহযোগীরা জোর করে আমাকে গ্রুপে ঢুকিয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর/জেডএফ
আরও পড়ুন:
‘০০৭’ গ্রুপের মিশন, রিফাত হত্যা পরিকল্পনা আগের রাতেই
প্রকাশ্যে হামলা, স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না স্ত্রী