স্বর্ণ চুরির ঘটনা আড়াল করতেই শেলটেক টাওয়ারে আগুন
১ জুলাই ২০১৯ ০৪:২৯
ঢাকা: রাজধানীর পরীবাগে শেলটেক টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পৃথক তদন্তে উঠে এসেছে। ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণচুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়। অগ্নিকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে এলে যেন তাদের ওপর স্বর্ণচুরির দোষ চাপানো যায়।
যদিও শেষ পর্যন্ত চোরদের পরিকল্পনা সফল হয়নি। এরইমধ্যে চুরি যাওয়া ৬৫ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বর্ণচুরিতে জড়িত বাসার গৃহকর্মী শাহদাত (২২) ও ইয়াসমিনকে (৪০) গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ ।
তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, স্বর্ণচুরির ঘটনাটি বাসার গৃহকর্মীরাই ঘটিয়েছে। যে কারণে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুন দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর পরীবাগের ১৫ তলা বিশিষ্ট শেলটেক টাওয়ারের ১১ তলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রায় আধাঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু আগুন নেভানো শেষে ফিরে আসার সময় ওই ফ্ল্যাট থেকে জানানো হয় তাদের ৭০ ভরি স্বর্ণ হারিয়ে গেছে। বলার চেষ্টা হচ্ছিল, ফায়ার সার্ভিস সদস্যরাই স্বর্ণ চুরি করেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, স্বর্ণ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সেখান থেকে যেতে দেওয়া হবে না।
পরে শাহবাগ থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। কিন্তু এমন অপ্রীতিকর ও অপমানজনক ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও কর্মকর্তারা।
ঘটনার শিকার ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুন নিভিয়ে আমরা ফিরে আসছিলাম। এমন সময় সে ফ্ল্যাটের মালিক সায়েম সিজারের বড় ভাইয়ের শ্যালক রাহাত আমাদের ডেকে জানান যে, তাদের রুমে ৭০ ভরি স্বর্ণ ছিল। সেগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় ফায়ার সদস্যদেরকে সন্দেহ করেন তারা। আমাদের তল্লাসি করার কথাও বলা হয়। কিন্তু চুরির অপবাদ দেওয়ার বিষয়টি আমাদের আত্মসম্মানে লাগে। আমরা কেউই রাজি হইনি। এমন অবস্থায় পুলিশের সহায়তায় আমরা বের হয়ে আসি।’
ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগুন নেভানোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম। কিন্তু শুরু থেকে একটা বিষয় আমার খুব সন্দেহ হয়। প্রথমে যে রুমে আগুন লাগে স্বাভাবিকভাবেই তার পাশের রুমে ছড়িয়ে পড়ার কথা। কিন্তু সেটি না হয়ে তার পরের রুমে আগুন লাগে। তাও আবার রুমের কোথাও না, শুধু তোষকের ওপর।
আবার যে রুমের আলমারি থেকে স্বর্ণ চুরি হয়েছে, আগুন ওই রুমের কোথাও লাগেনি। আগুন লাগে শুধু আলমারির ভেতরে। আমরা বিষয়টি উপ-সহকারী পরিচালককে অবহিত করি। তিনি বুঝতে পারেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল জলিল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওইদিন ঘটনাস্থলে আমিও ছিলাম। ঘটনার শুরু থেকেই লক্ষ্য করেছি, এটি পরিকল্পিত। অধিকতর তদন্তের জন্য সে সময় কিছুই বলিনি। আমরা এখনও ঘটনাটি তদন্ত করছি। খুব শিগগিরিই তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনার পরিবারের পক্ষ থেকে চুরির একটা মামলা হয়েছে। মামলায় ওই বাসার দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এখন কারাগারে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। তাই তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না। তবে এটুকু নিশ্চিত, স্বর্ণচুরির ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস জড়িত নয়।
স্বর্ণচুরির বিষয়ে ফ্ল্যাটের মালিক মো. সায়েম সিজার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওইদিন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তা মিটমাট হয়ে গেছে। বাসার কাজের লোকেরা স্বর্ণচুরি করেছে। স্বর্ণগুলোও নাকি উদ্ধার হয়েছে। সেগুলো এখন পুলিশের কাছে রয়েছে।’
সারাবাংলা/এসএইচ/একে