গ্যাসের দাম বৃদ্ধি উৎপাদন ও বিনিয়োগে বাধা
১ জুলাই ২০১৯ ১৯:০৪
ঢাকা: গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রফতানিতে। দেশে নতুন উৎপাদন ও বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। একাধিক ব্যবসায়িক নেতা সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে এসব আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পক্ষের আপত্তির মুখে রোববার (৩০ জুন) সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। সব পর্যায়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে গড়ে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে গৃহস্থালিতে ২২ থেকে ৩৮ শতাংশ, যানবাহনে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও বাণিজ্যিকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ৩৫ শতাংশ দাম বেড়েছে গ্যাসের। তবে গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে। অন্যান্য খাতের মধ্যে বিদ্যুতে ৪১ শতাংশ, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৪৪ শতাংশ, সারে ৬৫ শতাংশ, শিল্পে ৩৮ শতাংশ ও চা-বাগানে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বলে মন্তব্য ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খানের।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার গ্যাসের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এটি শিল্প উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টকর হবে। আমরা বলেছিলাম ধাপে ধাপে গ্যাসের দাম বাড়াতে। কিন্তু সরকার এটি করেনি। দ্রুতই সরকারের এ বিষয়টি আমলে নেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, গ্যাসের বাড়তি দাম শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় রফতানি কমে যাবে।
এই ব্যবসায়ী নেতাও বলছেন, ধীরে ধীরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন তারা। তবে সরকার তাদের সেই অনুরোধ শোনেনি। এখন গ্যাসের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ দাম বেড়ে যাওয়ায় তা বিনিয়োগকেও বাধাগ্রস্ত করবে মনে করছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে প্রত্যাশা তার।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আরও বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাতে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেটা না হলে উৎপাদন ও বিনিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোয় তা পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকে সরকারের মুনাফা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তিই নেই। শুনানির সময় আমরা আপত্তি তুলেছি, কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। ৬ টাকার গ্যাস ১০ টাকা হয়ে গেছে। আমরা বেতন বাড়িয়েছি। সব মিলিয়ে শিল্প মালিকরা কষ্টের মধ্যে আছে। এমন সময়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য তার।
বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে গ্যাসের দাম দেড় শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন খরচ বাড়ায়। এবারে গ্যাসের দাম ৩৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার অর্থ তাই উৎপাদন খরচ প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে যাওয়া। রুগ্ন পোশাক শিল্পে যারা সংগ্রাম করে টিকে আছে, তাদের জন্য এটি নতুন একটি আঘাত।
রুবানা হক আরও বলেন, গ্যাসের পরিস্থিতি কিন্তু এখনো উন্নত হয়নি। এখনো গ্যাসের চাপ সবসময় পুরোটা পাওয়া যায় না। কারখানাগুলো নানা চাপের মধ্যে আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দামও বাড়েনি। এসব চ্যালেঞ্জ থাকলেও বিনিয়োগকে তেমনভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে হঠাৎ করে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা বাধাগ্রস্থ হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
উৎপাদনে বাধা গ্যাসের দাম গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পোশাক খাত বিনিয়োগে বাধা শিল্প কারখানা