Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দশ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৮ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা


২ জুলাই ২০১৯ ০৯:৫৫

ঢাকা: খেলাপি ঋণের কারণে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১০টি ব্যাংক। এর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে ৬টি। বাকি চারটি ব্যাংকের মধ্যে ৩টি বেসরকারি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। সম্মিলিতভাবে দশটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৮ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রুপালি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এবি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো মূলধন সঙ্কটে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাত আরো চাপে পড়বে। তাই, যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এটা উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এটি বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। সর্বশেষ তিন মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মূলধন ঘাটতি বাড়ে। সব মিলিয়ে পুরো খাতে ১১ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে, গত ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ছিল ২৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ তিন মাসে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ কমেছে ৫ হাজার ১৬ কোটি টাকা। আর মূলধন ঘাটতি কমার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রেখেছে সোনালি ব্যাংক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ৫ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটি ঘাটতি পূরণ করে এখন উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৩ কোটি টাকা।

কোন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কত
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে কৃষি ব্যাংকের। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক, ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এছাড়াও অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৭৩৪ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক ২৩৬ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ১৫৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৪৩৪ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ৩৭৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে ভালভাবে যাচাই-বাছাই না করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়া হয়েছে। যা পরবর্তীতে খেলাপি হয়ে পড়ছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। বাড়তি অর্থ যোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের কারণেই ব্যাংকে সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। বাড়ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ, এতে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না, ফলে বাড়ছে মূলধন ঘাটতি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি ব্যাংকে যখন সুশাসন না থাকে, তখন জাল-জালিয়াতির প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে, খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ে। ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যেভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তার প্রধান কারণ জালিয়াতি। এর প্রভাবে মূলধন ঘাটতি বাড়ে।

উল্লেখ্য, ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডার বা মালিকদের জোগান দেওয়া অর্থই মূলধন হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

খেলাপি ঋণ ব্যাংক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর