‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তথ্যপ্রযুক্তি আইন, মতাদর্শ দমন নয়’
২ জুলাই ২০১৯ ২২:৩৫
বাংলাদেশের আলোচিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দিতে। একইসঙ্গে সহিংসতা উসকে দেয় এমন মিথ্যা তথ্যের প্রচার রোধেই এই আইনটি প্রয়োজন। তবে কারও কণ্ঠরোধ বা কোনো মতাদর্শ দমন করতে আইনটি বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সোমবার (১ জুলাই) ওয়াশিংটন টাইমসের মতামত বিভাগে প্রকাশিত সজীব ওয়াজেদের লেখায় এসব কথা উঠে আসে।
পৃথিবীর সব দেশেই ডিজিটাল সিকিউরিটি বিষয়ক আইন রয়েছে উল্লেখ করে জয় জানান, দুঃখজনকভাবে কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি আইনটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, সরকার এমন আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক ও মুক্তমনাদের কণ্ঠরোধ করছে। তবে তা সত্য নয়।
সজীব ওয়াজেদ জয় আরও লেখেন, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে। দেশে রয়েছে ৯টি জাতীয় দৈনিক ও ৩০০’র বেশি আঞ্চলিক পত্রিকা। যেগুলো সরকারের সমালোচনা করে ও নিজেদের মতাদর্শ তুলে ধরে। এছাড়া একটি সরকারি টিভি চ্যানেলের বিপরীতে, বেসরকারি ৩০টির মতো টেলিভিশন চ্যানেল সংবাদ পরিবেশন করে ও রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে। দেশের ২২০টির বেশি অনলাইন সংবাদ ওয়েবসাইটও একই স্বাধীনতা উপভোগ করে।
সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে ও সাইবার অপরাধীদের কাছ থেকে সবাইকে নিরাপদ রাখতে বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যমগুলোকে কাঠামোবদ্ধ করতে যে আইন করা হয়েছে তা নিখুঁত নয়, নতুন কোনো আইনের ক্ষেত্রেই একেবারে পরিপাটি হওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র দুটোই রয়েছে উল্লেখ করে জয় লেখেন, দুটোকে একই সূতায় গাঁথা সহজ নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাইবার আইন কার্যকরের ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। এ আইনে অনেককে গ্রেফতার করা হলেও এখনো কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। এছাড়া, খসড়া আইন নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। সাংবাদিকরাও তাদের মতামত জানিয়েছেন। সবার সহযোগিতা নিয়েই আইনটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আইনটির পরিবর্তন বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।
সজীব ওয়াজেদ জয় আরও জানান, ডিজিটাল মাধ্যমে যেকোনো অনিয়ম রোধে ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করতে বদ্ধ পরিকর। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বা সংখ্যালঘু হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়ে যেমন আইনে শাস্তি আছে তেমনি ভিন্ন মতাদর্শে যারা সংখ্যালঘু তাদের ভয় দেখানো হলেও শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে অনলাইনে ভুল বা মিথ্যা তথ্য ছড়ালে তা বিপর্যয়কর হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন জয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তগণমাধ্যমের নিশ্চয়তা দিয়েছেন উল্লেখ করে জয় লেখেন, গণমাধ্যমগুলোকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। জনস্বার্থে সত্য সংবাদ প্রচার করতে হবে। গণমাধ্যম আইন লঙ্ঘন করলে, গণমাধ্যমের কারণে ক্ষতি হলে। তা আইনের আওতায় আনা হবে।
২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্ট বা তথ্যপ্রযুক্তি আইন স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ। এটি নিখুঁত নয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ডিজিটাল আইন ও নিরাপত্তা বিষয়ে উন্নতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/এনএইচ