‘পাবনার রায় প্রমাণ করেছে, বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নেই’
৪ জুলাই ২০১৯ ১৬:০০
ঢাকা: পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলার দায়ে বিএনপির ৪৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোর্টের দণ্ডাদেশে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা শুধু হতাশ নই, আমরা বিক্ষুব্ধ এই রায়ে। এই রায়-ই প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নেই।’
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ড্যাব এ প্রতিবাদ সভা আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে ১৯৯৪ সালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৫ বছর পর গতকাল পাবনার কোর্টে যে রায় দেওয়া হয়েছে, সে রায়ে গোটা জাতি বিস্মিত হয়েছে।’
‘এটা কোন ধরনের রায়? দু’টো গুলির শব্দ হয়েছে! গুলির শব্দটা কারা করেছে, কে করেছে? সেটাও কন্ট্রোভার্সিয়াল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল ৯ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। এটা কী?— প্রশ্ন বিএনপি মহাসচিবের।
এর আগে বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টায় পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুস্তুম আলী এক রায় দেন। সেই রায়ে পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলার দায়ে ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়। সাজাপ্রাপ্ত এই ৪৭ জন ব্যক্তিই স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের আর কোনো আস্থা নেই। বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলা, বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলায় প্রমাণ হয়েছে, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে।’
সরকার সুপরিকল্পিতভাবে, সচেতনভাবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছে। অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে। মুখে লম্বা লম্বা কথা। আর হাজার হাজার বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট— সব তাদের পকেটে চলে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে শেষ। চুরি করে ডাকাতি করে একেবারে ফোকলা করে দিয়েছে। আজকে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে যায়। বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির হাতে ব্যাংকগুলো আসে। শেয়ারবাজার লুট হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা হাইজ্যাক হয়ে যায়। সোনা তামা হয়ে যায়। এসব নিয়ে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া সরকারের নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চীনে গেছেন, খুব ভাল কথা। কার দাওয়াতে গেছেন? একটা অর্থনৈতিক ফোরামের দাওয়াতে গেছেন। চীন সরকারের দাওয়াতে যান নাই। আমরা খুব খুশি হতাম, যদি দেখতাম রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসে, ওটাকে প্রায়োরিটি দিয়ে কাজটি করছেন। এরইমধ্যে কিছু চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি মেগাপ্রোজেক্ট চুক্তি, মেগা দুর্নীতির চুক্তি।’
বাংলাদেশের জনগণ এই অবস্থা মেনে নেবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি নেত্রীর (খালেদা জিয়া) স্থান বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। লন্ডন থেকে ম্যাডাম আসার পর পরই আমরা যখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেলাম, সারা রাস্তায় মানুষের ঢল— এটাই তাদের ভয়। কারণ, তারা জানে নেত্রী যদি একবার বের হয়ে গণতন্ত্রের বাঁশি বাজাতে শুরু করেন, তাতে যে জনস্রোত নেমে আসবে, সেই জনস্রোত রোধ করার ক্ষমতা তাদের নেই।’
ড্যাবের আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেনসহ ড্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সারাবাংলা/এজেড/জেএএম