কী আছে ভবন দুটির ভাগ্যে?
৫ জুলাই ২০১৯ ০১:২৭
ময়মনসিংহ : গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা প্রথমে বলছে, ‘ছয় তলা ভবনটি হেলে পড়েছে, খালি করতে হবে ‘ আবার একদিন পরে তারা বলছেন, ‘পাশের ভবনের নকশায় ত্রুটি রয়েছে। ছয় তলা ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত, ধ্বসে পড়ার মতো কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।’
প্রশাসনের দুই রকম মনোভবের মধ্যে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকার ছয় তলা ও চার তলা ভবনের ২০টি পরিবার ভবন দুটি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভবন দু’টির ভাগ্যে কী আছে সেটা জানার জন্য বাড়ির মালিকদের আগামী সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ভবন নিয়ে জেলা প্রশাসনের গঠিত নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রথম দিনে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সমির কুমার বসাক সারাবাংলাকে বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছি। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় সোমবার পর্যন্ত আমাদের সময় আছে। ওই সময়ে ভবন দুটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার (০৩ জুলাই) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে নগরীর সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকায় একটি ছয় তলা ভবন পাশের চার তলা ভবনের ওপর হেলে পড়ে। পরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাত ১২ টার দিকে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান সংবাদকর্মীদের জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে ভেতরে কোনো ফাটল দেখতে পাইনি। বাইরে থেকে মনে হচ্ছে ভবনটি একটু হেলে পড়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রশাসন কমিটি করবে। আমরা বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারব। এই সময়ে ভবনটিতে কারও থাকা ঠিক হবে না বলে মত দিয়ে জেলা প্রশাসনের মতো তিনিও ভবনটি ছেড়ে দিতে বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে ভবনের সামনে গিয়ে কথা হয় প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত বলা চলে। এখানে কেউ এখন অবস্থান করলে কোনো বিপদ হবে না। ভবনটি ধ্বসে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ তবে ছয় তলা ভবনটির পাশের চারতলা ভবনের নকশায় ত্রুটি মিলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত কোনো ভবন হেলে পড়লে তাতে বড় রকমের ফাটল দেখা দেয়। তবে ভবনটিতে আমরা সেই রকম কোনো ফাটল দেখতে পাইনি।
এদিকে, উদ্বিগ্ন মানুষজন ভবনটিকে ঘিরে ভিড় করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বুধবার রাতে যারা আতঙ্কে ভবন ছেড়েছিলেন তারাও পরিস্থিতি দেখতে আসেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভ্যানে করে আত্মীয় স্বজনের বাসায় যেতে দেখা গেছে অনেককে।
হেলে পড়া ছয় তলা ভবনটির মালিক ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা পেরে উঠেনি তারাই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়েছে। সোমবার তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিলে প্রমাণিত হবে আমার ভবনটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। তখন ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।
সারাবাংলা/এসএইচ/কেকে