পাঙ্গাসবাহী ট্রাকে মহাসড়কের ক্ষতির আশঙ্কা
৫ জুলাই ২০১৯ ০৮:৫৯
ময়মনসিংহ: চার বছর আগে পাঙ্গাস মাছবাহী ট্রাককে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ‘প্রধান শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাকগুলোর ড্রামের মধ্যে নেট ব্যবহারের; যাতে ড্রামের পানি উপচে মহাসড়ক ভিজে বিটুমিন ওঠে না যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
এ অঞ্চলের মাছ ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীর ওই নির্দেশনা মানেননি। মাছ জীবিত রাখার বাণিজ্যিক স্বার্থে প্রতিদিনই ময়মনসিংহ থেকে পাঙ্গাসবাহী প্রায় তিন শতাধিক ট্রাক ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। ট্রাকের ড্রাম থেকে প্রতিনিয়িই পানি উপচে ভিজছে সড়ক। এতে করে চারলেনের এই মহাসড়কটির ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মহাসড়কে গর্ত সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের চারলেনের কাজ চলাকালীন ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিদর্শনে এলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) লোকমান হোসেন মিয়া তাঁর কাছে পাঙ্গাস মাছবাহী ট্রাকে মহাসড়কের সর্বনাশের কথা প্রথম তুলে ধরেন। ওই সময় মন্ত্রী মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দেন তাঁকে। এরপর জেলা প্রশাসক একই বছরের আগস্টে ভালুকা ও ত্রিশালে মাছচাষী এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে মাছবাহী ট্রাকের ড্রাম থেকে পানি পড়া বন্ধে নেট ব্যবহার করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
এরপরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১০ মে ওবায়দুল কাদের মহাসড়কে পাঙ্গাস মাছবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর কিছু মাছ ব্যবসায়ী ট্রাকের ড্রামে নেট ব্যবহার করলেও সার্বিক অবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, জেলার ভালুকার হাজীর বাজার, বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও ত্রিশাল উপজেলার বইলর এবং বাসস্ট্যান্ড এলাকার ২০টিরও বেশি অবৈধ পানির পাম্প রয়েছে। এসব পাম্প থেকেই পাইপের মাধ্যমে ট্রাকে পানি সরবরাহ করা হয়। পানি সরবরাহকারী পাম্প মালিকরা এর মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করছেন।
মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার বইলর বাজার এলাকায় আব্দুল গণির পানির পাম্পে বেশকয়েকটি ট্রাকে থাকা ড্রামে পানি ভরার কাজ করছিলেন হেলপার জুলহাস (২৬)। ড্রামে নেট ব্যবহার না করলে সড়কের ক্ষতি হয় জেনেও তার ভাষ্য- ‘কেউ তো আমগরে নেট লাগাইতে কয় না। কইলে অবশ্যই লাগাইতাম।’
কয়েক কিলোমিটার এগুতেই ত্রিশাল দরিরামপুর এলাকায় সারি সারি মাছবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা মেট্রো ট-২২-২৬৪১ নম্বর ট্রাকের চালক শফিকুল ইসলাম (৪০) জানান, ড্রামে নেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়। আর কোনো ট্রাকের চালক বা মাছ ব্যবসায়ীই এই নিয়ম মানেন না।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান জানান, এর আগে আমরা কয়েকবার ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে এই প্রবণতা বন্ধ করেছিলাম। এখন আবার শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশনা দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পরেও বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বেলায়েত হোসেন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত হওয়ার পর এখান দিয়ে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। যাতায়াতে সময়ের ব্যবধানেও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় নেমে এসেছে। তবে পাঙ্গাস মাছবাহী ট্রাকের দিকে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় মহাসড়কটি নষ্টের শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে।
সারাবাংলা/পিটিএম