ঘাতকের ছুরিকাঘাতে ভালোবাসার সমাপ্তি
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২১:২১ | আপডেট: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২১:২৯
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: পরিবারের সম্মতিতে ভালোবেসে দুই বছর আগে ঘর বাধে লিজা আক্তার ও মো. আরাফাত রহমান। কিন্তু ঘাতকদের ছুরিকাঘাতে হঠাৎ ভেঙে গেল সংসার। সঙ্গী হারা হলেন আরাফাত। শুক্রবার দুপুরে হায়দার ক্লিনিকে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন লিজা।
লিজার স্বামী আরাফাত রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বরগুনায় এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছি দুজন। দুজনের বাড়ি বরগুনায়। তালতলী ডিগ্রি কলেজে অধ্যয়নের সময় দুজনের প্রেম হয়। পরে পরিবারকে জানালে পারিবারিকভাবেই দু’ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়।’
কান্নাসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন,“ক্লিনিকে যাওয়ার পরও লিজার সঙ্গে কথা হয়েছে। শেষ কথা হয়েছে শুক্রবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে। শনিবার আমাদের দু’জনেরই সাপ্তাহিক ছুটি। লিজা আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আগামীকাল কী রান্না করবে?’ আমি বললাম, ‘তোমার যা খুশি।’ তার কিছুক্ষণ পরই শুনি ওকে খুন করা হয়েছে। অথচ প্রথমে ওই ক্লিনিকের মালিক নজরুল ইসলাম হায়দার আমাকে ফোনে জানান, লিজার দুর্ঘটনা হয়েছে। তার একটু পরেই জানান, কে বা কারা ক্লিনিকে ঢুকে লিজাকে খুন করেছে।”
ক্লিনিকের পাশে ট্রাভেল অ্যাজেন্সির কর্মচারী মোহাম্মদ শামীম সারাবাংলাকে জানান, হায়দার ক্লিনিকের মালিক নজরুল ইসলাম হায়দার বাড্ডা এলাকার স্থানীয়, অনেকেই তাকে চেনেন। যে সময় হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ওই সময় তেমন কিছু শুনতে পাওয়া যায়নি। সন্দেহজনক কাউকেও ওই সময় চোখে পড়েনি।
নিহত লিজার শ্বশুর মো. মজিবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিয়ের পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এসে একটি বায়িং প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয় আরাফাত। পরে লিজাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ৩ মাস আগে হায়দার ক্লিনিকে চাকরিতে যোগ দেন লিজা। ভালই দিন যাচ্ছিল। প্রতিদিন সকাল ৯টায় ক্লিনিকে চলে আসত লিজা। দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে লাঞ্চের জন্য বিরতি পেত লিজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু শুক্রবার দুপুরে ক্লিনিক থেকে লাঞ্চের জন্য বিরতি পায়নি লিজা। আর লাঞ্চ বিরতির সময়ের কিছুক্ষণ পরই তাকে খুন করা হয়। ৩ টা ৪২ মিনিটে ফোন আসে লিজার দুর্ঘটনা হয়েছে। তার একটু পরেই আবার ফোন করে বলা হয় তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। খবর শুনে দ্রুত এসে দেখি ক্লিনিকের দরজার সামনে লিজার লাশ পড়ে আছে।’
বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ক্লিনিকের বাইরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। কিন্তু সেটি বিকল হয়ে আছে। আমরা এখন পরীক্ষা করে দেখছি সিসিটিভি ক্যামেরাটি আগে থেকেই নষ্ট ছিল নাকি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য কেউ সেটি নষ্ট করে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফরেন্সিক টিমকে খবর দিয়েছিলাম। ফরেন্সিক টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে নিয়েছে। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্লিনিকটির মালিক ও সিকিউরিটি গার্ডকে থানায় এনেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।’
সারাবাংলা/এসআর/এনএস