রাজনীতিতে ফিরতে ইউটার্ন বিএনপির
৬ জুলাই ২০১৯ ২২:২১
ঢাকা: কিছুদিন আগেও সব কিছুতে ‘না’ বলে আসছিল বিএনপি। কিন্তু হঠাৎ করেই অনেক কিছুতে ‘হ্যাঁ’ বলতে শুরু করেছে দলটি। আর এই ‘হ্যাঁ’ বলার মধ্য দিয়ে ফের রাজনীতিতে ফিরছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি— এমনটিই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
অবশ্য দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি রাজনীতিতে ছিল না— কথাটি ঠিক নয়। গণমানুষের দল হিসেবে জনমত ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে যে কোনো বিষয়ে আমরা ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলি।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর বিএনপি সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে যাবে না এবং এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদেরকে বহিষ্কার করে দলটি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাদে নির্বাচিত পাঁচজনই শপথ নেন। ফখরুলের ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জি এম সিরাজ।
দলীয় সূত্রমতে, স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত, নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বহিষ্কার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মাঠ পর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকায় বিএনপির তৃণমূলে অস্থিরতার জন্ম দেয়। বিভিন্নি প্রোগ্রামে তৃণমূল নেতাদের তোপের মুখে পড়েন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
এমন পরিস্থিতিতে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দায়ে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের সবার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয় তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। তবে আমাদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বা কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে তারা অংশ নিতে পারেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন, দেরিতে হলেও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন- সবকিছুতে ‘না’ বলতে বলতে তাদের দল রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে মাঠ পর্যায়ে তাদের যে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক আছে, তাদেরকে তারা হারাবে। নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হলেও অন্য দলে ভিড়বে তারা।
এমন উপলব্ধি থেকেই আগের অবস্থান থেকে সরে এসে স্থানীয় নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নেবে তারা।
জানা গেছে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে নেওয়া এসব সিদ্ধান্তে তৃণমূল নেতারা যেমন খুশি, তেমনি দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের মধ্যম সারির নেতারাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, বৈরী পরিবেশ এবং প্রতিকূলতার মধ্যে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে দলের ভবিষ্যৎ আরও খারাপের দিকে যাবে। তাই প্রতিকূলতার মধ্যেই সবধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল, সে সময়ের প্রেক্ষাপটে সেগুলো সঠিক ছিল। এখন নতুন করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোও সঠিক। একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্তে অটল থাকা সম্ভব না। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। দলের একজন কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, সব ধরনের নির্বাচনে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে, তা সঠিক। যদিও বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।’
শুধু নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নয়, তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। চলতি জুলাই মাসেই এ কর্মসূচি পালন করবে তারা। এরইমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কর্মসূচির ধরন সম্পর্কে আলোচনা করেছে বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। ঈদুল আজহার আগেই অন্তত চারটি বিভাগে প্রতিবাদ সভা করার চিন্তা করছেন তারা। এসব সভায় কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিভাগ থেকে তাদের তারিখ নিচ্ছি। কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।’
জানতে চাইলে খুলনা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমাবেশের তারিখ নিয়ে মঞ্জু (খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু) ভাই’র সঙ্গে কথা বলেন মহাসচিব। তবে তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু সারাবংলাকে বলেন, ‘মহাসচিব গত পরশু আমাকে মেসেজ দিয়েছেন জুলাইয়ের মাঝামাঝি একটা তারিখ ঠিক করতে। আমি জেলাগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। ১৫ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে রংপুর বিভাগে সমাবেশ হতে পারে।’
সারাবাংলা/এজেড/একে