বামদের হরতাল: পল্টন-শাহবাগে পিকেটিং
৭ জুলাই ২০১৯ ০৯:২৬
ঢাকা: গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধাবেলা হরতাল সফল করতে রাস্তায় নেমেছে বামদলগুলো। হরতালের সমর্থনে রোববার (৭ জুলাই) ভোর ছয়টা থেকেই রাজধানীর পুরানা পল্টন ও শাহবাগ মোড় এলাকায় মিছিল-পিকেটিং করেছে গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতাকর্মীরা।
সকাল ৭ টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়, মুক্তাঙ্গন ও প্রেসক্লাব এলাকায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করেছেন।
এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন হরতালে নৈতিক সমর্থন দেওয়া সোশ্যালিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (এসপিবি), ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
তবে হরতালে নৈতিক সমর্থন দিলেও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদল খেলাফত মজলিসের কোনো নেতাকর্মীকে পল্টন এলাকায় দেখা যায়নি।
এদিকে আধাবেলা হরতালের প্রথম দুই ঘণ্টায় পল্টন এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হরতাল আহ্বানকারীদের জোরদার পিকেটিংয়ের মধ্যেই পল্টন এলাকায় যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। পল্টন মোড়ে সড়কের মাঝখানে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে স্লোগান-বক্তৃতার সময় যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য থেমে গেলেও সিনিয়র বাম নেতাদের হস্তক্ষেপে তা স্বাভাবিক হয়।
পিকেটিংয়ের সময় একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে বামদলের কর্মী-সমর্থকরা হেনস্তা করার চেষ্টা করেন। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটমাট হয়। এ সময় একজন পরিবহন শ্রমিককে বাস থেকে টেনে নামাতে গেলে হরতালকারীদেরই আরেকটি অংশ কর্মী-সমর্থকদের এ কাজ থেকে ফিরিয়ে আনেন।
এদিকে পুরানা পল্টন এলাকায় পিকেটিংয়ে অংশ নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাম নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সোশ্যালিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশের (এসপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, সাবেক ছাত্র নেতা লিটন নন্দীসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকশ নেতাকর্মী।
বামগণতান্ত্রিক জোটের হরতালে মূল পিকেটিং এলাকা পুরানা পল্টন মোড়ে সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে কয়েকটি প্রিজন ভ্যান, রায়টকার ও জলকামান। সম্ভব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।
এদিকে হরতালের সমর্থনে শাহবাগ অবরোধ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। সকাল সাতটার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা শাহবাগ এলাকা হয়ে কাঁটাবনের দিকে যায়। সেখান ইউটার্ন নিয়ে মিছিলটি জাদুঘর এলাকায় এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে তারা রাস্তা অবরোধ করে স্লোগান দেয়। এ সময় পুরো এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের এই পিকেটিং একজন রিকশা চালক এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক বক্তব্য দেন। রাজধানীর ৭টি সড়ক থেকে রিকশা তুলে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই রিকশা চালক এবং স্কুলশিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করেন সঞ্চয়পত্রের টাকায় কর আরোপের কারণে।
গত রোববার (৩০ জুন) গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সংস্থাটি জানায়, সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ বাড়ায়।
বিইআরসি’র ঘোষণা অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে রান্নাঘরে ব্যবহৃত এক বার্নারের চুলার জন্য গ্যাসের বিল দিতে হবে ৯২৫ টাকা, যা আগে দিতে হতো ৭৫০ টাকা। আর দুই বার্নারের চুলার জন্য গ্যাসের বিল দিতে হবে ৮০০ টাকার জায়গায় ৯৭৫ টাকা। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশায় ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম করা হয়েছে ৪৩ টাকা।
গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালে নৈতিক সমর্থন দেয় বিএনপি, খেলাফত মজলিস, নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।
সারাবাংলা/টিএস/এজেড/পিটিএম