Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২১৩ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট: গোঁজামিল নয় সোজামিলে ইসি


৯ জুলাই ২০১৯ ১৪:১৪

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া কোনোক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ করে তা তদন্তে রাষ্ট্রপ্রতি মো. আবদুল হামিদের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কাছেও বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় তারা।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এসময় তিনি ফলাফল বিশ্লেষনের চুম্বক অংশ তুলে ধরেন।

পরে নিজের বক্তব্যে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা নির্দলীয় সংগঠন। আমরা কোনো দলের পক্ষে বলছি না। আমরা এই দেশের জনসাধারণের পক্ষে। আমরা দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়া রক্ষা করার পক্ষে। কারণ এই নির্বাচনি প্রক্রিয়াটা যদি ভেঙে যায় তাহলে দেশে আর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার বদল হবে না। অশান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার বদল হলে তা সবার জন্যই অশনি সংকেত।’

বদিউল আলম বলেন, এবার ১০৩টি আসনের ২১৩ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। ৫৮৭টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ছাড়া কেউ ভোট পাননি। এর মধ্যে কেবল একটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ ৫৮৬টি কেন্দ্রে কেবল নৌকার প্রতীক ভোট পেয়েছে। ৬৮৫টি কেন্দ্রে ঐক্যফ্যন্টের প্রার্থী একটি ভোটও পাননি। বগুড়ার তিনটি আসন ছাড়া একটানা চারটি নির্বাচনে বিএনপি যে সব আসনে জিতেছে সেখানেও এবার তারা সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে ১৯.৪ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

সুজনের নির্বাহী সদস্য কলামিস্ট আবুল মকসুদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘অতীতেও বাংলাাদেশে অস্বচ্ছ নির্বাচন অনেক হয়েছে। ফলাফল নিয়ে অনেক গোঁজামিল আমরা দেখেছি। তবে এবার নির্বাচন কমিশন গোঁজামিলে না গিয়ে সোজামিলে চলে গেছে। সোজামিল শব্দটার অর্থ হলো শতভাগ। শতভাগের চেয়ে সোজামিল আর হয় না। এই যে সোজামিল ঘটনাটি ঘটেছে এটা মুক্তিযদ্ধের ভিত্তিতে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত, রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সেজন্য নির্বাচন কমিশনের সোজামিল নিয়ে আমরা যে আলোচনা করছি তা মোটের ওপর অর্থহীন। এ নিয়ে বেশি কথা বলার মানে নেই। একটা কথা বলতে পারি, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অন্য কোনো ব্যাপারে না হলেও এই নির্বাচনের ফলাফর নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। সহজে এই জিনিস কেউ ক্ষমা করবে না, আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।’

‘নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা করা হয় রিটার্নিং অফিসারের সাক্ষরের ভিত্তিতে। অথচ ভোটের পর রিটার্নিং অফিসাররা যে ফল দিয়েছিলেন তার সঙ্গে এবার নির্বাচন কমিশন যে ফল দিয়েছে তার মিল নেই বেশ কিছু কেন্দ্রে। এটা কীভাবে সম্ভব?’ এমন প্রশ্নও রাখেন বদিউল আলম মজুমদার।

সংবাদ সম্মেলনে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আগে থেকেই এই নির্বাচন নিয়ে যেসব অভিযোগ ছিল সেগুলো হলো-মনোননয়ন বাণিজ্য, নির্বাচনি প্রচারে বাধা, ঐক্যফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়া, আগের রাতে ব্যালট ভরা, কোনো কেন্দ্রে ১১টার মধ্যে ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়া, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে প্রবেশ না করা, জোর করে সিল দিয়ে নেওয়া, নির্বাচনি দায়িত্ব নিয়োজিত কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ব্যবহার করা।

তবে এবার কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষনে বহু অনিয়ম ও অসঙ্গতি দেখা গেছে বলে জানান দিলীপ কুমার। তিনি বলেন, ‘১০৩টি নির্বাচনি এলাকায় ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে যা কোনোক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। ৭৫ নির্বাচনি এলাকায় ৫৮৭টি ভোটকেন্দ্রের সব ভোট নৌকা প্রতীকের পক্ষে পড়েছে, যা অস্বাভাবিক। এমনকি মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে যে ভোটের ব্যবধান তাও স্বাভাবিক নয়। ব্যালট পেপারে ভোট ও ইভিএমে ভোট গণনার ফলাফলেও যে পার্থক্য দেখা গেছে তাও গ্রহণযোগ্য নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক।

সারাবাংলা/এসএমএন

টপ নিউজ বদিউল আলম মজুমদার সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সৈয়দ আবুল মকসুদ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর