‘আত্মহত্যা করতে এসেছেন? আমাদের সঙ্গে কথা বলুন’
১০ জুলাই ২০১৯ ০৮:২৩
‘আপনি আত্মহত্যা করতে এসেছেন? আমাদের এই লেখাটা পড়েছেন? আমাদের সঙ্গে কথা বলুন। কল সামারিয়া ফ্রি’- ব্রিজে ওঠা-নামার পথে দেয়ালে খোদাই করে এবং ব্যানারে বার্তাটি দেওয়া হয়েছে। তার ঠিক নিচেই সামারিয়ার ফোন নম্বর।
সামারিয়া মূলত একটি এনজিও সংস্থা। হতাশায় আত্মহত্যা করতে যারা এই ব্রিজে আসেন তাদের প্রতি সামারিয়ার এই বার্তা। অকালে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার আগে তাদের সঙ্গে একান্তে আলাপের প্রস্তাবও বলা যায় এবং এই উদ্যোগে তারা সফল। কেননা তাদের সঙ্গে আলাপ শেষে অনেক মৃত্যুপথযাত্রীই আত্মাহুতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
কেন এই বার্তা? কেনই বা সামারিয়া সুদীর্ঘকাল ব্যাপী এই কাজ করে আসছে? ১৯৭৪-১৯৯৩, ১৯ বছরে ব্রিস্টলের এই সাসপেনশন ব্রিজ থেকে মোট ১২৭ জন পড়ে আত্মহত্যা করেছিল। কতো নিরাপত্তা, কতো নিরাপত্তাকর্মী তবুও আত্মহত্যা থামিয়ে রাখা যায়নি। তবে আশার কথা হল, সংখ্যাটি এখন কমে এসেছে। আগে যেখানে বছরে আটজন আত্মাহুতি দিত সংখ্যাটি এখন চারে নেমে এসেছে।
ব্রিজটিতে যেমন প্রাণ হারানোর মর্মান্তিক কাহিনী আছে, ঠিক তেমনি আছে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার অদ্ভুত এক গল্প। সারাহ এন হেনলি নামের ২২ বছরের এক তরুণী আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। ব্রিজের যে পাশে পাহাড় অর্থাৎ সুইসাইড পয়েন্ট থেকে লাফও দিয়েছিলেন। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। তার পরনের স্কার্ট প্যারাস্যুট হিসেবে কাজ করেছিল। ওপর থেকে সারাহ পড়েছিলেন নিচের কাদার মধ্যে। শোনা যায়, এরপর ৮০ বছর বেঁচেছিলেন এই তরুণী।
এমন সব লোমহর্ষক গল্প ও শোকগাঁথা লেখা আছে ব্রিস্টলের সাসপেনশন ব্রিজকে কেন্দ্র করে। অথচ এটি ব্রিস্টলের প্রধান দর্শনীয় স্থান! বিস্ট্রলে আসবেন কিন্তু সাসপেনশন ব্রিজের সৌন্দর্য্যে অবগাহন করবেন না এটা হতেই পারে না।
দেখতে এটি ঝুলন্ত সেতু। দৈর্ঘ্য ১৩৫২ ফুট। এটি ইংল্যান্ডের প্রাচীনতম আধুনিক সেতু। বাংলাদেশে ব্রিটিশ পতাকা ওড়ার আগেই ব্রিজটি নির্মাণের আইডিয়া আসে উইলিয়াম ভিক নামের এক ব্যবসায়ীর। চারদিকে ঘন সবুজ বনানী আর কুলকুল রবে বয়ে যাওয়া অ্যাভন নদীর ওপরে ব্রিজটি ক্লিফটন ও লেইউডকে যুক্ত করেছে।
১৮৩১ সালে শুরু হয় ব্রিজের নির্মাণ কাজ। শেষ হতে লেগেছে ৩৪টি বছর। ব্রিজে উঠতে টোল দিতে হবে মাত্র ১ পাউন্ড। ৩১ ফুট চওড়া ব্রিজে যানবাহনের জন্য ২টি লেন, পথচারি পারাপারের জন্যও রয়েছে ২টি লেন। ভুল করে কেউ পথচারী পারাপার দিয়ে না হেঁটে রাস্তা পেরুতে চাইলেই গুনতে হবে জরিমানা।
পর্যটনের পাশাপাশি বৈশ্বিক ক্রীড়ার আলোচনায়ও ব্রিজটি চির স্মরণীয়। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের মশাল শুরুটা হয়েছিল এখান থেকেই। তাছাড়া নিরাপদে ওপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়া বাঙ্গি জাম্পের শুরুটাও এখানেই। যার শুরুটা ১৯৭৯ সালে। মূলত এই বাঙ্গি জাম্পই সাসপেনশন ব্রিজকে এনে দিয়েছে বিশেষ পরিচিতি।
সারাবাংলা/এমআরএফ/এসজে/জেএইচ