বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে আগ্রহী নয় বামরা
১০ জুলাই ২০১৯ ০৯:৫২
ঢাকা: দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে ‘সাইড বেঞ্চে’ বসিয়ে রেখে বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের যে চিন্তা-ভাবনা করছিল বিএনপি, শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মতাদর্শে ভিন্নতা থাকায় বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রকার রাজনৈতিক ঐক্যে আগ্রহী নয় বাম রাজনৈতিক দলগুলো।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, তেল আর জল যেমন মেশে না, তেমনি ‘দক্ষিণপন্থী’ রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে বামদের কোনো রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে না।
২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পর খালেদা জিয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে ‘দক্ষিণপন্থী’ রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ২০ দলীয় জোট গঠনে সক্ষম হয় বিএনপি। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তৎপরতায় ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হয় বিএনপি।
কিন্তু গত আট বছর ধরে বার বার চেষ্টা করেও দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। সক্রিয় বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাদের। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের সঙ্গে ‘চিরকালীন’ ও ‘ঐতিহাসিক’ সম্পর্কের কারণে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়তে রাজি হয়নি বামরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম), আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার পাশাপাশি মঞ্জুরুল আহসান খান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শাহ আলম, কমরেড খালেকুজ্জামান, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মোশাররফ হোসেন নান্নু, সাইফুল হক, রাজেকুজ্জামান রতন, জোনায়েদ সাকির মতো বাম নেতাদের পাশে পেতে চায় বিএনপি। আর এ জন্য প্রয়োজন হলে জামায়াতের সঙ্গে ‘কৌশলগত’ দূরত্ব বজায় রাখতে প্রস্তুত তারা।
এ কারণেই ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিকদল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম জামায়াতকে নিয়ে পৃথক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ গঠন করলে তাতে কোনো আপত্তি করেনি বিএনপি। বরং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বিএনপি। দূর থেকে দিয়েছে মৌন সম্মতিও।
পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই শীর্ষ নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বামদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এরই মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কলেবর বাড়াতে চাই। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান শরিক বিএনপির সম্মতি নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করেছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতারা সরসরি না হলেও আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আদর্শিক কারণেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন কোনো জোটে অন্তর্ভূক্ত হতে তারা রাজি নন। বিশেষ করে, যতদিন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্যে রাজি হবে না বামরা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যদিয়ে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে, বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের কথা চিন্তা করবে তারা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘তেল আর জল যেমন মিশ খায় না, তেমনি বিএনপির সঙ্গে সিপিবির কোনো প্রকার সম্পর্কের কথা চিন্তা করা যায় না।’
সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি একটি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে বামদের ঐক্য অবান্তর বিষয়। এটা নিয়ে আলোচনার প্রশ্নই আসে না।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটা দুঃশাসনের মধ্যে আছি। এই দুঃশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য দরকার। সেই ঐক্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে আপসের মাধ্যমে নয়— এ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা কোনো প্রস্তাব পাইনি। তবে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি বামদের নিয়ে তারা ঐক্য করতে চায়। আমাদের বক্তব্য হলো, আগে তাদের রাস্তায় নামতে হবে। রাজপথই সঠিক পথ তৈরি করে দেবে।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম