Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার চোরাবালিতে আটকা পড়েছে আদালত’


৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:৫৪

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : ষোড়শ সংশোধনী মামলায় সরকার হারলেও ইতিহাস জিতেছে বলে মন্তব্য করেছেন  অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে আপিল বিভাগে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,‘ষোড়শ সংশোধনী আমার বিবেচনায় সরকার হেরেছে সত্য, কিন্তু ইতিহাস জিতেছে।’

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তৎকালীন সরকার যেহেতু চায়নি বিচার হোক, সে জন্য বিচার হয়নি। অনেক বেঞ্চ মামলা শুনতেও চায়নি। সে সময়ে কোনো রায়ে বঙ্গবন্ধুর নামও উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে প্রত্যেক বিচারক বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ করেছেন। জাতির পিতা হিসেবেও তার নাম উল্লেখ করেছেন। আদালতের রায়ে বঙ্গবন্ধু উপাধিটি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে।’

প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনাকে আমরা আশ্বস্ত করতে পারি যে, আদালতের ভাবমূর্তি উন্নত করার জন্য, বিচার কাজকে গতিশীল করার জন্য, দেশের বিচার ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য, বিচারকাজে স্বচ্ছতা আনার জন্য এবং বিচারক ও আইনজীবীদের মঙ্গলের জন্য আপনি যে পদক্ষেপ নিবেন সে বিষয়ে আমরা আপনাকে নিঃশর্ত সমর্থ দেব। আমাদের প্রত্যাশা আপনি এগিয়ে চলুন। আমরা আপনার সঙ্গে থাকব।’

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পারিবারিক পরিচিতি, শিক্ষা-কর্মজীবনের নানাদিক তুলে ধরে  মাহবুবে আলম বলেন, ‘সংবিধানের বিধানমত আপনি ২০২১ সালের শেষ দিন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির পদে আসীন থাকবেন। এটা দীর্ঘ সময়। আমাদের বিচার বিভাগের বর্তমান যে অবস্থা, যদি আপনি দৃঢ় পদক্ষেপ নেন তাহলে এই সময়কালে আপনি আমূল পরিবর্তন আনতে পারবেন।’

বিজ্ঞাপন

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর রায়কে বিচার বিভাগের জন্য রেনেসাঁ যুগ হিসেবে অভিহিত করে মাহবুবে আলম বলেন, ‘সামরিক ফরমান, আদেশ সংবিধানে স্থান পেতে পারে না এবং সংবিধানের সঙ্গে তুলনা করে কোনোভাবেই তা আইন হিসেবে গণ্য করা যায় না।’

‘বিচার বিভাগে অবক্ষয় ঘটে চলেছে’ মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর যাবত আমাদের বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটেছে। সাধারণ জনগণের কাছে এ আদালতের যে ভাবমূর্তি ছিল তাতে পরিবর্তন ঘটেছে।’

হাইকোর্ট বিভাগের বিভিন্ন বেঞ্চের দুর্নীতি তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাইকোর্টের কতিপয় বেঞ্চ সম্পর্কে যেসব আলোচনা হয় তা প্রকাশ করার মতো নয়।’

তিনি বলেন, ‘এরশাদের সময় হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকার বাইরে গিয়ে আবার ফিরে আসলেও আদালত বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। চার বছর আগের মামলার শুনানি না হলেও দুই মাস আগের আগের মামলা চূড়ান্ত শুনানি হয়ে যাচ্ছে।’

‘আদালতের কিছু অসাধু কর্মচারী মামলা নিচের থেকে উঠানোর কাজ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আগে একটি কী দুটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হতো। এখন মাসের পর মাস রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হচ্ছে না মাসের পর মাস-’ বলেন মাহবুবে আলম।

হাইকোর্টের বিচারপতিদের সময়ানুবর্তিতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ আদালতে যোগদানের পর দেখেছি কাঁটায় কাঁটায় সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারপতিরা এজলাসে বসতেন। কোর্টে বসা ও কোর্ট থেকে নামার সময়ের মধ্যে কোনো ব্যত্যয় ঘটত না। কিন্তু এখন কার্যতালিকার সময়ের সঙ্গে বিচারকদের এজলাসে ওঠা-বসার কোনো সঙ্গতি নেই। এ অবস্থা চললে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আমি মনে করি, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা বিরাট অংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, বিশেষ কোর্ট।  অনেক কোর্ট বিশেষ বিশেষ আইনজীবীদের কোর্ট হয়ে গেছে। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’

বিজ্ঞাপন

ফৌজদারি মামলার জামিন শুনানির ব্যপারে পরিবর্তনের সুপারিশ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলে, ‘যে আদালতে জামিন প্রার্থনা করা হবে সে আদালতেরি সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সে জামিন আবেদনের অনুলিপি সরবরাহ করার নিয়ম করা উচিৎ।’

তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো বেঞ্চে বিচারপতিরা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তার বেঞ্চ অফিসারের উপরে এবং আইনজীবীদের কথায় তারা কোনো কর্ণপাত করেন না বরং তারা পরিচালিত হন তাদের বেঞ্চ অফিসারদের প্রভাবে। এরইমধ্যে একজন বিচারপতি অবসরে গেছেন। তার প্রতিটি মামলার রায়ই ছিল একইরকম বাক্যসমৃদ্ধ এবং অনেকে হাসাহাসি করত এই কথা বলে যে, তার হয়ে তার রায় লিখে দিচ্ছেন তার বেঞ্চ অফিসার।’

‘এছাড়াও তিনি অবসরে যাওয়ার আগে মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত না হওয়া এবং কার্যতালিকায় মামলা না থাকা পরও রায় প্রদান করেন। কোনো কোনো বিচারপতি মামলা কার্যতালিকায় না এনেও জামিন বা স্থগিত আদেশ দিচ্ছেন। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?’

এর আগে সকাল সোয়া ৮টার দিকে সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি আদালতে আসেন। তখন রেজিস্ট্রার অফিস থেকে তাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা নতুন এ প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানান।

সারাবাংলা/এজেডকে/একে/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু
২১ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫২

ফটোসাংবাদিক শোয়েব মিথুন আর নেই
২১ অক্টোবর ২০২৪ ২১:০৭

সম্পর্কিত খবর