আসামের বন্যা চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে
১৩ জুলাই ২০১৯ ১৩:০৯
ঢাকা: ভারতের আসামে ভয়াবহ বন্যার কারণে ৮ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আসামের অবস্থান বাংলাদেশের উজানে হওয়ায় সেখানকার বন্যার প্রভাব পড়তে পারে এদেশেও। তাই অব্যাহত বৃষ্টি ও আসাম থেকে আসা পানিতে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। তবে বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
বাংলাদেশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি আ স ম সুজা শনিবার (১৩ জুলাই) সারাবাংলাকে জানান, চলতি সপ্তাহে যদি বৃষ্টি আরও বাড়ে, তাহলে অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানিও বাড়বে। আসামের পাহাড়ি অঞ্চলের পানি যদি সুরমা-কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
আ স ম সুজা জানান, আসামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ সহ আরো পাঁচটি নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। তবে এখনো পর্যন্ত বড় বন্যার সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। দেশের বন্যা পরিস্থিতিকেও স্বাভাবিক বলছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই সহকারী সচিব।
এদিকে, আসামের পাশের জেলা মৌলভীবাজারে মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে এরই মধ্যে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া এবং কমলগঞ্জ উপজেলার অর্ধশতাধিক স্থান। জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, যেকোনো সময় এই জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আসাম থেকে বয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে। ফলে এই জেলাতেও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানাচ্ছে, সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গে তিস্তা নদীর পানিও এই মুহূর্তে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে দেশে কমপক্ষে ১০ জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুরমা, যমুনা, সোমেশ্বরী, কংস, সাংগু, হালদা, মাতামুহুরী ও ফেনী নদীর পানিও বিপদসীমার কাছাকাছি চলে গিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব আ স ম সুজা জানান, ভোলার দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ৯ নং ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানি জমেছে তবে শহর রক্ষা বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার একটি খালের বাঁধ ভেঙে সেখানে কয়েকটি গ্রাম ও ফসলের মাঠ ডুবে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া, যমুনা নদীর পানি বেড়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, কংস, ভোগাই, ধনুসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টার অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার হাওর অঞ্চলেও পানির উচ্চতা বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলার হাওরেও পানির উচ্চতা বেড়েছে। ফলে এই জেলার সাত উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। জেলার উপর দিয়ে যাওয়া সুরমা নদীর পানি ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই এলাকায় ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এই জেলার কয়েকটি থানায় এরইমধ্যেই সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে একজন জেলা কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/টিএস/জেএএম