Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিপলস লিজিংয়ের টাকা আগে পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীরা


১৪ জুলাই ২০১৯ ২১:০০

ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অবসায়ন হতে যাওয়া পিপলস লিজিংয়ের টাকা আগে ফেরত পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীরা। এরপর ফেরত দেওয়া হবে বন্ড ইস্যুকারী বন্ডহোল্ডার ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টাকা। এরপরও যদি টাকা থাকে তবে সেখান থেকে কোম্পানির উদোক্তা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার টাকা ফেরত পাবেন।

আমনত পরিশোধে ঘাটতি থাকলেও কোম্পানির উদ্যেক্তা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডাদের কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে না। তবে কোনো পরিচালক ঋণ নিয়ে থাকলে তাকে সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের সবার আগে টাকা পরিশোধ করা হবে। তারপর ফেরত দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টাকা। তবে সবকিছু নির্ভর করবে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।’

অন্যদিকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা সবার আগে টাকা ফেরত পাবেন। এদের মধ্যে প্রথমে ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারী, তারপর বন্ড ইস্যু হয়ে থাকলে বন্ডহোল্ডাররা, এরপর পাবেন প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। তারপর কিছু থাকলে পাবেন উদ্যেক্তা পরিচালক ও কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা। কারণ শেয়ারহোল্ডাররা মালিক, সবাইকে দিয়ে কিছু থাকলে তারা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমানতকারীদের পাওনা টাকার চেয়ে যদি আমানতের পরিমাণ কম থাকে ওই কম টাকাই ভাগ করে দেওয়া হবে। কারণ কোম্পানিটি লিমিটেড লাইবেলিটি, ফলে শেয়ারহেল্ডাদের দায় শেয়ারহোল্ডিং পর্যন্ত। শেয়ারহোল্ডাররা প্রযোজনে কোনো অর্থ পাবেন না, কিন্তু নেগেটিভ দায় নিতে হবে না। অর্থাৎ আমানতকারীর পাওনা অনুযায়ী পরিশোধ করার মতো অর্থ না থাকলেও উদ্যেক্তাদের বাড়তি কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। তবে কোম্পানি থেকে কেউ ঋণ নিয়ে থাকলে তা উদ্ধার করে আমানতকারীদের ফেরত দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

আবু আহমেদ বলেন, ‘সরকার চাইলে আমানতকারীদের ভর্তুকি দিয়ে পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু সরকার কয়টা প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি দেবে। কারণ অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো না। তবে পিপলস লিজিংয়ের যে সম্পদ রয়েছে, তা উদ্ধার করতে পারলে আমানতকারীদের সমস্যা হওয়ার কথা না।’

কোম্পানি কখন অবসায়ন হয়: আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২(৩) ধারা অনুযাযী, আমানতকারীর স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করতে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানি আইনে যাই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের জন্য আদেশ দিতে পারেন। অন্যদিকে একই আইনের ৮ ধারায় রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাতকারীদের স্বার্থহানি হয় এমনভাবে ব্যবসা করা, আমানতকারীর দায় পরিশোধে অপর্যাপ্ত সম্পদ, অবসায়ন বা কার্যক্রম বন্ধ, কোম্পানির লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ ইত্যাদি করে থাকলে।

অবসায়ন প্রক্রিয়া: বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২ এর ৩ এবং ২৯ ধারা অনুযায়ী পিপলস লিজিং অবসায়নের (লিকুইডেশন) অনুমতি চেয়ে গত ২১ মে অর্থমন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির অবসায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আদালতে যেতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতে যাওয়ার জন্য কোম্পানি অইন বিশেষজ্ঞ একজন ব্যারিস্টার নিয়োগ দিয়েছেন। তারপর আদালত কর্তৃক একজন অবসায়ক (লিকুইডেটর) নিয়োগ দিলে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি দায়-দেনা নিরীক্ষা করা হবে। নিরীক্ষার পর পাওনাদারের মধ্যে পর্যায়ক্রমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এছাড়া অবসায়ক প্রতিষ্ঠানটির কিভাবে তার পাওনা টাকা উদ্ধার করবেন তাও চূড়ান্ত করবেন। সব দায় দেনা পরিশোধ ও পাওনা টাকা উদ্ধারের পর প্রতিষ্ঠানটি অনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

পিপলস লিজিংয়ের অর্থিক অবস্থা: পিপলস লিজিংয়ে বর্তমানে আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা হলো ৬ হাজার ব্যক্তিশ্রেণির আমানত। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ, যা মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লভ্যাংশ দিতে পারছে না। তবে আমানতের বিপরীতে কাগজে কলমে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালেল ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যলয় রাজধানী মতিঝিলের সিটি সেন্টারে। এছাড়া গুলশান এবং চট্রগ্রামে দুইটি শাখা কার্যালয় রয়েছে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। মোট শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ, উদ্যোক্তা পরিচালদের ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আট দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/এমআই/পিটিএম

টপ নিউজ টাকা ফেরত পিপলস লিজিং

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর