Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতালি প্রবাসী হত্যার নেপথ্যে ইয়াবার নেশা, উল্টোপথে গাড়ি


৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৯:১৮ | আপডেট: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৯:৩৪

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : ধানমন্ডিতে বিএমডাব্লিউ গাড়ির চাপায় ইতালি প্রবাসী আব্দুল মোতালেব ডাবলু (৫৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এরইমধ্যে নাজমুল হুদা আলামিন (২৪) ও তার বন্ধু সানিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রোববার তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত তাদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

ধানমণ্ডি জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি সারাবাংলাকে বলেন,  গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর হোয়াইট হল কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় ঢাকা মেট্টো-গ-৩৩-০০৬৫ গাড়িটি বরযাত্রীদের ওপর সজোরে চালিয়ে দিলে ঘটনাস্থলে মোতালেব মারাত্মক আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ বরযাত্রীর আরো অনেকে আহত হন।

গাড়ি নিয়ে আলামিন পালানোর সময় হাজারীবাগ থানার এসআই মমিনের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে মমিনের গাড়ির বেশ ক্ষতি হয়।

মোতালেবকে উদ্ধার করে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৩টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

সহকারী কমিশনার আরো বলেন, এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা ও হাজারীবাগ থানায় পুলিশের ওপর গাড়ি চাপা দেওয়ার কারণে আরো একটি মামলা হয়। দুই মামলায় আলামিন ও সানিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে তাদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার তিন আগে আলামিন একটি বিএমডাব্লিউ গাড়ি কেনেন। গাড়িটি নিয়ে আলামিন তার বন্ধু সানি ও সানির স্ত্রী জারাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। জারার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে সানি ও আলামিন মোহাম্মদপুর থেকে চারটি ইয়াবা কেনে। মোহাম্মদপুর থেকে আসার সময় ধানমন্ডি এলাকায় আরো দুটি গাড়িকে তারা চাপা দেয়। ওই সময় নিজের গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা তা দেখতে নিচে নামলে তারা ইয়াবা ৪টি হারিয়ে ফেলেন। এরপর তারা ইয়াবার জন্য আবার মোহাম্মদপুরে ছুটে যান। আরো চারটি ইয়াবা নিয়ে টাকা পরিশোধ না করেই দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে আসেন। আসার সময় হোয়াইট হল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বরযাত্রীরা জ্যামে আটকা পড়ে। ওই সময় বরযাত্রীদের লক্ষ করে আলামিন ও সানি গালিগালাজ করেন।

বিজ্ঞাপন

তারা বরযাত্রীদের লক্ষ্য করে বলেন, রাস্তা কি তোদের বাপের। এ সময় তারা আরো বেশি খারাপ আচরণ করলে আশেপাশের লোকজন তাদের মারধর করেন। এ সময় সানিকে রেখে জারাকে নিয়ে আলামিন গাড়ি টান দিয়ে জিগাতলার দিকে যান। ধানমন্ডি ইয়োলো’র সামনে এসে এসআই মমিনকে গাড়ি চাপা দেয়।

এরপর আলামিন জারাকে বলেন, চল, সানিকে নিয়ে আসি। তখন জারা বলে, আমাকে এখানে নামিয়ে দাও। এরপর জারাকে জিগাতলার সামনে নামিয়ে দিয়ে সানিকে আনতে যায়। কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছানোর আগে উল্টো দিকে গাড়ি চালিয়ে যায় আলামিন। গাড়িটি এত দ্রুত চালায় যে, অনেক লোকের ওপর চলন্ত গাড়ি তুলে দেন।

ঘটনার সত্যতা জানতে হাজারীবাগ থানার পাশে ৯৫/১, আলামিনের চারতলা বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তারা দুই ভাই। রাজীব বড় ও আলামিন ছোট। তাদের বাসার পাশেই রাজীব ট্যানারি নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার বাবার নাম সামছুল হুদা। হদু বা দুদু কোম্পানি নামে এলাকায় সবাই চেনে তাদের।

সুজন নামে বাসার সামনের এক হোটেল ম্যানেজার বলেন, হাজারীবাগ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি সামছুল হুদা। ছেলেদের মতো বাবাও সব সময় মদ খেয়ে পড়ে থাকেন। ছেলেরা দামি গাড়ি নিয়ে ঘোরেন। ইয়াবা খেয়ে মাতলামি করেন। শুনেছি গাড়ি চাপা দিয়ে লোক মেরেছে। তাই গতকাল আলামিনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

মামলার বাদী নিহতের শ্যালক হুমায়ুন মোল্লা বলেন, আব্দুল মোতালেব সম্প্রতি ইতালি থেকে দেশে আসেন। তার বাসা ধানমন্ডির শঙ্কর এলাকায়। আমার মেয়ে আনিকার বিয়ের দাওয়াত খেতে ওইদিন হোয়াইট হল কমিউনিটি সেন্টারে আসে।

হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলীমুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে আটকেরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আলামিন একজন চীনা মেয়ে বিয়ে করেছেন। তাকে নিয়ে প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় গভীর রাতে বাইরে ঘুরে বেড়ানোর কথাও স্বীকার করেছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/একে

 

বিজ্ঞাপন

এবারের বাজুস ফেয়ার স্থগিত
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৬

আরো

সম্পর্কিত খবর