পাহাড় ধস আর বন্যার ঝুঁকিতে ২ লাখ রোহিঙ্গা
১৫ জুলাই ২০১৯ ১৬:০১
কক্সবাজার: টানা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে কক্সবাজারে। কখনো থেমে থেমে, কখনো মুষলধারে সেই বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শরনার্থী শিবিরগুলোকে বসবাস করা রোহিঙ্গা নাগরিকরা। পাহাড়ধস ও বন্যার ঝুঁকিতে এই মুহূর্তে রয়েছেন অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা।
এরইমধ্যে পাহাড় ধস ও পানিতে ভেসে এক নারী ও চার শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার বসতঘর। সম্পর্ণভাবে ভেঙে গেছে প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারকে অন্য স্থানে সরিয়ে নতুন ঘর তৈরি করে দিচ্ছে প্রশাসন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন জানিয়েছে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তাদের অস্থায়ী বসবাসের জন্য পাহাড়ী এলাকায় এই পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ঝুপড়ি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি পরিবারের প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা পাহাড় ধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বেশ কয়েকটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার জামতলী ক্যাম্পে পানিতে ভেসে গিয়ে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত কয়েকদিনে পাহাড় ধসে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে এক নারী, হাকিমপাড়া ক্যাম্পে ও মধুরছড়া ক্যাম্পে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ো হাওয়া ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজারের বেশি বসতঘর। বৃষ্টির পানির তোড়ে অনেক সড়ক হাঁটা-চলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এসব ক্যাম্পের বাসিন্দারা।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রমিজ উদ্দিন জানান, রাতে পাহাড় ধসের আতংকে ঘুমাতে হয় তাদের। যদিও কারও ঘর ভেঙে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে তা ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও আতংক কমছে না।
বালুখালী ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা লিয়াকত আলী বলেন, ‘বৃষ্টিতে ক্যাম্পের মধ্যে খুবই কষ্ট হয়। রাস্তার উপর পাহাড়ের মাঠি ভেঙে পড়ে। নিচে পানি জমে যায়। যাতায়তে খুবই কষ্ট হয়। ভারি বৃষ্টিতে ঘরের ভিতরে পানি পড়ছে। ঠাণ্ডা লেগে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এসব বিষয়ে কথা হয় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালামের সঙ্গে। বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশু মৃত্যু আর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বিশাল এ রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে রক্ষাই এখন বড় চ্যালেজ্ঞ। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা পাহাড়ধস ও বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৩ শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে। তবে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অন্যত্র সরিয়ে দ্রুত ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধস ও বন্যার আশংকায় প্রতিটি ক্যাম্পে মাঝিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সতর্ক করা হয়েছে। অতি ঝূঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরতদের আপাতত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্যাম্পের ভেতরে থাকা মসজিদ, সাইক্লোন শেল্টার, আশপাশের স্কুলের ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসএমএন
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প কক্সবাজারে ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন মানুষ