Sunday 06 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জেলের ভেতরে-বাইরে’ ভাই-বোনের ইয়াবা ব্যবসা


১৫ জুলাই ২০১৯ ১৯:০৩ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ১৯:০৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আদালতে হাজিরা দিতে আনা কারাবন্দি মাদক ব্যবসায়ী রেজাউল করিম ওরফে ‘ডাইল করিম’কে ইয়াবা দিতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে তার ভাই নুরুল ইসলাম নুরু; যে নিজেও একজন মাদক বিক্রেতা।

গ্রেফতারের পর নুরুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে- তারা পাঁচ ভাই ও এক বোন নগরীর ছোটপুল এলাকায় প্রকাশ্যে কাউন্টার বসিয়ে ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রি করত। পরে এলাকার লোকজন ওই কাউন্টার ভেঙে দিলে তারা অন্যভাবে এখনও মাদক ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে। ডাইল করিম কারাগার থেকে ওই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি কারাগারের ভেতরেও রয়েছে তাদের ইয়াবা ব্যবসা।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে নুরুকে ২০পিস ইয়াবাসহ হাতে নাতে ধরে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে নুরু তাদের পারিবারিক মাদকের ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

বিজ্ঞাপন

ওসি মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডাইল করিম কারাগারে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি করে। তার পরিবারের সদস্য এবং ব্যক্তিগত কর্মচারিরা আদালতে গিয়ে ডাইল করিমকে ইয়াবা দেয়। বিভিন্ন কৌশলে সে ইয়াবাগুলো কারাগারের ভেতরে নিয়ে যায়। তার কাছ থেকে ১৮ গ্রাম ইয়াবার গুঁড়া উদ্ধারের ঘটনায় গত ২১ জুন ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এরপরও সে কারাগারে ইয়াবা নেওয়া বন্ধ করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাইল করিমের ছোট ভাই নুরু শনিবার (১৩ জুলাই) মাদকের মামলায় জেল খেটে জামিনে ছাড়া পায়। জেল থেকে বের হওয়ার সময় করিম তাই ভাইকে নির্দেশ দেয় ইয়াবা পাঠানোর জন্য। করিমের ব্যক্তিগত কর্মচারি শাহজাহানের কাছ থেকে সে ইয়াবা নিয়ে গিয়েছিল ভাইকে দিতে। কিন্তু আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ ধরে ফেলে।’

ডাইল করিম (৪৫) চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানার ছোটপুল কাঁচাবাজার এলাকার মৃত জানে আলমের ছেলে। নগর গোয়েন্দা পুলিশ এ বছরের ৪ এপ্রিল তাকে গ্রেফতার করেছ। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ, যার সবগুলোই মাদক আইনের। তার ভাই নুরুর বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদকের ৭টি মামলা।

পুলিশ জানায়, ডাইল করিমের বাবা জানে আলমের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর সংসারে আছে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। এরা হল- রেজাউল করিম ওরফে ‘ডাইল করিম’, মো. আলাউদ্দিন, নুরুল ইসলাম নুরু, শামীমা আক্তার, পারভিন আক্তার ও দিনা আক্তার। দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে আছে দুই ছেলে মো. মহিউদ্দিন ও মো. সালাহউদ্দিন। তাদের এক বোন সোমা আক্তার মাস ছ’য়েক আগে আগুনে পুড়ে মারা যায়।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নুরু তথ্য দিয়েছে- তাদের পাঁচ ভাই ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বোনদের মধ্যে পারভিন আক্তারও ইয়াবা-ফেনসিডিল বিক্রি করে। তারা প্রত্যেকে মাদকসেবীও। ডাইল করিমের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারও ইয়াবাসেবী। মাদক বিক্রেতা স্বামী নুরুকে ছেড়ে গেছে তার স্ত্রী আসমা।

ওসি বলেন, ‘ডাইল করিম ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকায় মাদকের ব্যবসা করে। আস্তে আস্তে সে ভাইবোনদেরও এই ব্যবসায় যুক্ত করে। ছোটপুল এলাকায় তাদের মাদক বিক্রির একটি কাউন্টার ছিল। সেখানে প্রকাশ্যে ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রি করতো। কাউন্টারে চারজন কর্মচারি ছিল। বছরখানেক আগে সেটি এলাকার লোকজন ভেঙে দেয়। এরপরও তারা মাদকের ব্যবসা বন্ধ করেনি। তাদের ছয় ভাইবোনের বিরুদ্ধে একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে।’

ওসি জানান, ডাইল করিমের পারিবারিক মাদক ব্যবসার পাঁচ কর্মচারি হলো- আবদুল্লাহ, রেজাউল, বাবু, শাহজাহান ও আজিজ। এদের মধ্যে বাবু ২ মাস আগে ও আজিজ একমাস আগে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছে।

ওসি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নুরু জানিয়েছে- তাদের পাঁচজন কর্মচারিই ইয়াবা ও ফেনসিডিল সংগ্রহ করে। এলাকায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা হিসেবেই এখন তাদের পরিবারের সদস্যরা মাদক বিক্রি করছে। এছাড়া বিভিন্ন উপায়ে কিছু মাদক ডাইল করিমকে দেওয়া হয়। করিম সেগুলো কারাগারের ভেতরে নিয়ে ব্যবসা করে।

নুরুর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় ডাইল করিম ও শাহজাহানকেও আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

‘জেলের ভেতরে-বাইরে ইয়াবা ব্যবসা

বিজ্ঞাপন

পবিত্র আশুরা আজ
৬ জুলাই ২০২৫ ০৩:১৮

আরো

সম্পর্কিত খবর