চরাঞ্চলে তীব্র হচ্ছে শুকনো খাবার-বিশুদ্ধ পানির সংকট
১৭ জুলাই ২০১৯ ১৯:৫৫
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে তীব্র হচ্ছে শুকনো খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট। প্রায় সোয়া ছয় লাখ পানিবন্দি মানুষের বিপরীতে এখন পর্যন্ত প্রশাসন যে পরিমাণ সহযোগিতা দিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের অধিকাংশ টিউবওয়েল এখন পানির নিচে। এসব এলাকার কিছু কিছু আশ্রয় কেন্দ্রেও বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। যে কারণে তীব্র হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এদিকে শৌচাগার না থাকায় বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারীরা। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে তীব্রতর হয়েছে গবাদি পশুখাদ্যের সংকট।
বন্যা কবলিত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক জায়গায় বন্যার পানি নেমে গেলেও শুকনো খড়ির অভাবে রান্না করতে পারছেন না তারা। সঞ্চয় শেষ হয়ে যাওয়ায় একবেলা-আধাবেলা খেয়েই দিন পার করছেন অনেকে। বাড়ছে ত্রাণ সামগ্রীর ওপর নির্ভরশীলতা।
রৌমারী উপজেলার চর বন্দবের ইউনিয়নের বন্দবের গ্রামের ফিরোজা বেগম (৪৫) বলেন, ‘বন্যায় খুব কষ্টে আছি। রান্না করার উপায় নাই। ঘরে শুকনা খাবারও নাই। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাঁচার উপায় থাকবে না।’
রৌমারী উপজেলার বন্দবের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আমার ইউনিয়নে ৪৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে পানি বাড়ছেই। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ১১০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, আমার উপজেলায় শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি। আমরা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।
বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নয়টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রৌমারী, চর রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে শহর রক্ষা বাঁধ। যে কারণে উঁচু এলাকাও ডুবতে শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নয়টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৯৮টি গ্রাম। বুধবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫শ’ মেট্রিক টন চাল এবং ৯ লাখ টাকা।
কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা কবলিত পরিবারগুলো শুকনো খড়ি ও চুলার অভাবে রান্না করতে পারছে না। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে ৯ লাখ টাকা জিআর ক্যাশ দিয়েছি। তারা শুকনো খাবার কিনে দিচ্ছেন। নতুন করে ৪ লাখ ৮৮ হাজার পরিবারের জন্য ভিজিএফ বরাদ্দ এসেছে, শিগগিরই বিতরণ করা হবে।
সারাবাংলা/এটি
উলিপুর কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী পানিবন্দি বন্যা বিশুদ্ধ পানি ভুরুঙ্গামারী রৌমারী শুকনো খাবার