Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এজলাস সংকটে ঢাকার বিচারিক আদালত, ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা


১৮ জুলাই ২০১৯ ০৮:৫৯

ঢাকা: পুরান ঢাকার বিচারিক আদালতে এজলাস সংকট দীর্ঘদিনের। ফলে এক এজলাসে গাদাগাদিভাবে একাধিক বিচারকাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ও সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের মত গুরুত্বপূর্ণ আদালতে এই সমস্যার কারণে মামলা পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিয়মিত। এসব আদালতে প্রয়োজনীয় নথিপত্রের সংরক্ষণের জায়গার অভাবও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ছয় তলার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারকক্ষ ভাগাভাগি করে চলছে সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। এখানে সকালে বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারিক কাজ চলে। আবার দুপুরের পর একই এজলাসে চলে সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর ভেতরে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পরিচালনা করা হয়।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির পাশের রেবতী ম্যানশনের তৃতীয় তলায় সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর কার্যক্রম হয়। আর দুপুরের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচার কাজ শুরু হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পঞ্চম তলায় বর্তমানে সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ আর দুপুরের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচার কাজ পরিচালিত হয়।
এদিকে, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পুরনো ভবনের পঞ্চম তলায় সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম শেষে দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর কার্যক্রম শুরু হয়। একই ভবনের পঞ্চম তলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর কার্যক্রম শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর কার্যক্রম শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেরও এজলাস ভাগাভাগি করে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বোলছেন, এজলাসের অভাবে এভাবে বিচারিক আদালতে প্রায় সব এজলাসেই দিনে একাধিকবার ভিন্ন বিচারক দ্বারা বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে দিনের পর দিন।

এ বিষয়ে মহানগর অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল সারাবাংলাকে জানান, এখনও ঢাকার অনেক আদালতে কক্ষ ভাগাভাগি করে বিচারকাজ চালাতে হয়। এতে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু এ মুহূর্তে কিছুই করার নেই। নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। ওই ভবনগুলোর তৈরির কাজ শেষ হলে এসব আদালত সেখানে স্থানান্তর করা হবে। সেই সময় পর্যন্ত একটু কষ্ট করতে হবে।

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইবুনাল এটি। কিন্তু এটার কোন নিজস্ব এজলাস এখনও হয়নি। ফলে মামলা পরিচালনা করতে অনেক বেগ পেতে হয়। এর সাথে ভুক্তভোগীদের হয়রানি হতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, সাইবার ট্রাইবুনালের জন্য আদালত তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এর সমাধান হবে।
এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলেন, ‘আদালতে এজলাস সংকটের কারণে তাদের মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাছাড়া একটি মামলার জন্য বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের সারাদিন বসে থাকতে হয় বলে অভিযোগ করেন।’

বিষয়টি সুরাহা হলে ভালো হয় বলেও তারা মন্তব্য করেন। নিম্ন আদালতে বিচারকদের আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা প্রত্যেকটা জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট আর যেখানে মেট্রোপলিটন সিটি সেখাসে চিফ মেট্রাপলিটন কোর্টগুলো ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ করছি। একেকটি ভবন আট তলা দশতলা করছি। আর জেলা আদালতগুলো দোতলা থেকে চার পাঁচতলা করছি। এইগুলো হলেই আদালত আর ভাগাভাগি করে বসতে হবে না। আগামী বছর নাগাদ সারা বাংলাদেশের কোর্টগুলি ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ সম্পন্ন হয়ে যাবে। আগামী বছর শতভাগই এই ভাগাভাগির সমস্যা থাকবে না।’

আদালত প্রাঙ্গণে নেই বিচারপ্রার্থীদের বসার ব্যবস্থা

ঢাকার বিচারিক আদালতে আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীসহ প্রতিদিন পনের থেকে বিশ হাজার মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বসার কোনো জায়গা নেই।

এছাড়া জেলা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিদিন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী আসলেও তাদের বসার কোনো জায়গা নেই।

নিম্ম আদালতে দুর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসে বিচার প্রত্যাশীরা। আদালত পাড়ায় তাদের ভোগান্তির অন্ত নেই। বিচারপ্রার্থীরা কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এজলাসে আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা থাকলেও বিচারপ্রার্থীদের বসার কোন জায়গা নেই। ফলে আদালতের বারান্দায় ঘণ্টা পর ঘণ্টা।’

কথা হয় সাভার-আশুলিয়া থেকে ঢাকার নিম্ম আদালতে মামলার হাজিরা দিতে আসা মতিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার এতো বড় নিম্ম আদালত অথচ বিচারপ্রার্থীদের বসার কোনো স্থান নেই। এখানে আইনজীবীদের নিজস্ব চেম্বার আছে, এজলাসে বসার ব্যবস্থা আছে অথচ আমাদের (বিচারপ্রার্থীদের) বসার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দিন গেছে সারাদিন একটুও বসার সুযোগ হয়নি, স্থান সংকটের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।’

বনানী থেকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা নিতাই রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাক্ষ্য দিতে সকালে এসে শুনি কোর্ট উঠবে দুপুরের পর। এ সময়টা বসে পার করব সেই জায়গাটুকুও কোথায়ও নেই। জেলা জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। কিন্তু এখানে বসার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। তারপরেও বাধ্য হয়েছি বসতে। অল্প কয়েজকজন মানুষ এই ফাঁকা জায়গাতে বসতে পারলেও অধিকাংশদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, নারী ও শিশু মামলায় বিচারপ্রার্থীদের বসার জন্য আদালতের রেবতী ম্যানসনের ভেতরে ছোট একটি বসার জায়গা থাকলেও সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের জন্য নেই বসার কোনো ব্যবস্থা। মহানগর ও জেলা জজ আদালতে ভবনের সামনে বট, পাকুড় গাছের ছায়াই বিচারপ্রার্থীদের বসার একমাত্র ভরসা।

এ বিষয়ে ঢাকা নিম্ম আদালতের আইনজীবী ইউসুফ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইনজীবীদের বসার জন্য তাদের নির্দিষ্ট চেম্বার রয়েছে। কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের বসার জন্য কোনো জায়গা নেই। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘প্রতিটি আদালতের নিচে ছোট একটা করে বিশ্রামাগার বা বসার ব্যবস্থা রাখলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীদের জন্য সুবিধা হয়। এতে করে দুর-দুরান্ত থেকে আসা মানুষের ভোগান্তিও কমে যায়।’

সারাবাংলা/এআই/কেকে/জেডএফ

এজলাস বিচার প্রার্থীরা বিচারিক আদালত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর