Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, অধিকাংশই ‘প্যাটার্ন ৩’


২০ জুলাই ২০১৯ ০৯:৪৯

ঢাকা: বেড়েই চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাও। প্রতিদিন তাই বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মিলছে না পর্যাপ্ত বেড, যে কারণে হাসপাতালের ফ্লোর ও বারান্দা এবং বেডের পাশে কোনো খালি জায়গা থাকলেই সেখানে রোগী ভর্তি করে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সবাই।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকরা বলছেন, এবার অধিকাংশ রোগীই ডেঙ্গুর ৩নং প্যাটার্নে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এই প্যাটার্নের মূল ভূমিকা হলো আক্রান্ত রোগী আগেও আক্রান্ত হয়ে থাকলে সে এবার দ্রুত আক্রান্ত হবে। আগে ডেঙ্গু হলে সামান্য চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যেত, কিন্তু এবার আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীদের রক্ত লাগছে। এজন্য জ্বর, ব্যথা, বমি বমি ভাব, শরীর দুর্বল বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

তবে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি চিকিৎসক কিংবা নার্স। ফলে ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন যে পরিমান রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে, সে পরিমান রোগী কিংবা তার অর্ধেক রোগীও ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছে না। যে কারণে পর্যাপ্ত বেড না থাকলেও ফ্লোরে রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এতে হাসপাতালের চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০১ জন রোগী। আর গত ১৯ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫২২ জন। তার মধ্যে ১ হাজার ১৭৪ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬১৭ জন। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সরেজমিনে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির ২নং ভবনের ৬০১ নাম্বার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগে ভর্তি আছেন প্রায় দেড় শতাধিক। যার মধ্যে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন ফ্লোর ও বেডের পাশে খালি জায়গায় বিছানা করে। হাসপাতালটির ৩নং ভবনের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। সেখানেও পর্যাপ্ত বেড না থাকায় ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন ফ্লোর ও বেডের পাশে থাকা খালি জায়গায় বিছানা করে।

হাসপাতালটির প্রায় ৩০ জন রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীর বসবাস কামরাঙ্গীর চর, কেরানীগঞ্জ ও সূত্রাপুরসহ আশপাশের এলাকায়। আর তাদের অধিকাংশই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গেন্ডারিয়া থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু কামরুজ্জামান রাজকে (১৩) মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্বজনরা। শিশুটির মা রাজিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল সকালে তার জ্বর হয়। সঙ্গে শরীর খুব ব্যথা। বিকেলে রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু এখানে সিট নাই, তাই ফ্লোরে আছি। রাত থেকে ডাক্তাররা স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন।’

কেরানীগঞ্জের অপর একজন রোগীর স্বজন বাবুল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোট ভাই রিয়াজের (২৫) জ্বর হওয়ার মাত্র ৫ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে হাসপাতালে নিয়ে এলে সিট নেই বলে ডাক্তাররা অন্য দিকে যেতে বলে। কিন্তু অনেক অনুরোধ করে বেডের পাশে একটা বিছানা করে থাকার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের এখন সিটের দরকার নেই, দরকার চিকিৎসা।’

হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের বাড়তি চাপে চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ রোগীদের সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসক তো বাড়ছে না।’

মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় সিট না থাকার কারণে রোগী ভর্তি করানোর মতো অবস্থা থাকলেও ফিরিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এখন তো সব হাসপাতালেই চাপ বেড়েছে। তাই যেখানেই একটু জায়গা আছে সেখানেই ফ্লোরে সিটের ব্যবস্থা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটিতে ৩০৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও ডেঙ্গু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মানুষ হঠাৎ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো তিনি এর আগেও হয়তো এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যে কারণে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার খুব দ্রুত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ডেঙ্গুর ১ থেকে ৫টি প্যাটার্ন বা প্রকার থাকে। এবার অধিকাংশ রোগীই ৩নং প্যাটার্নে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এ প্যাটার্নের মূল ভূমিকা হলো আক্রান্ত রোগী আগেও আক্রান্ত হয়ে থাকলে সে এবার দ্রুত আক্রান্ত হবে। যার ফলে আগে দুই বা তিন দিন জ্বর থাকার পর ডেঙ্গুর সিনড্রম থাকলেও এবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তা ধরা পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে গত এক সপ্তাহে যে পরিমান রোগী ভর্তি হয়েছে তা গত ছয় মাসেও ভর্তি হয়নি। তার কারণ এবার আবহাওয়ার পরিবর্তনটা একটু আগেই হয়েছে। গতবছর যেখানে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল জুলাই থেকে এবং তা কিন্তু মার্চ-এপ্রিল থেকেই শুরু হয়েছে। যে কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।’ গত ১ সপ্তাহে এই হাসপাতালটিতে ৩৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় শহরমুখী রোগী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রুবায়েদ আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই হেমারজিক ফিভারে আক্রান্ত। আবার তাদের অর্ধেকেরই শক সিন্ড্রোম। কারণ এবছর ডেঙ্গুর প্যাটার্নটা একেবারেই ভিন্ন। যে কারণে আক্রান্ত রোগীদের সবার প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম) সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তবে আতঙ্কিত না হয়ে যদি সঠিক সময় চিকিৎসা নেওয়া হয় এবং ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিশ মশার উৎপত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় তাহলে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব।’ এজন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে নিয়োজিত সংস্থার পাশাপাশি বাসা-বাড়িতে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে বসবাসকারীদেরকেও বাড়তি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সারাবাংলা/এসএইচ/এমও

চিকিৎসা টপ নিউজ ডেঙ্গু ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গুর প্রকোপ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

সম্পর্কিত খবর