গণঅভ্যুত্থানে দুঃশাসনকে পরাজিত করা হবে: ফখরুল
২০ জুলাই ২০১৯ ২১:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের ‘দুঃশাসনকে পরাজিত করে’ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর নুর আহমদ সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এখন জনগণের কাছে যেতে হবে। থানায়-থানায়, ইউনিয়নে-ইউনিয়নে, গ্রামে গ্রামে, পাড়ায়-মহল্লায় মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়তে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার, তাদের বাঁচার অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, স্বাধীন থাকবার অধিকার অবশ্যই ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করতে হবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা ছড়িয়ে পড়ি মানুষের কাছে। ঐক্যের মধ্যে দিয়ে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের অধিকার, জনগণের সরকার আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব। আসুন আমরা জনগণের কাছে যাই।’
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলা কোনো মামলাই না। সরকারের একদলীয়করণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি আজ কারাগারে। তিনি ঠিকমতো খেতে-চলতে পারেন না। একদিকে সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দি করে রেখেছে, অন্যদিকে মিথ্যা মামলার কারণে তারেক রহমান বিদেশে আছেন।’
সরকার বিচার বিভাগ, পুলিশ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার মিডিয়ার ওপরও হস্তক্ষেপ করছে যাতে তারা অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে না পারে। এখন সরকারের খুশিমতো খবর প্রচার করতে হয়।’
আওয়ামী লীগ জনগণকে ভয় পায় মন্তব্য করে তারা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকার রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিল। রক্ষীবাহিনীকে দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। আজও একইভাবে, একই কায়দায় রাষ্ট্র-যন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণকে হত্যা করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।’
বাজেটের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘সরকার বাজেট দিয়ে বড়লোককে আরও বড় করার জন্য আর গরীব মানুষকে আরও গরীব করার জন্য। বাজেট ঘোষণার পর সমস্ত জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। অথচ সরকার নিজেদের ঢোল নিজেরা বাজায় যে, দেশে নাকি উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। বাংলাদেশ নাকি এখন উন্নয়নের রোল মডেল। অথচ কয়েকদিন আগেও একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ বলেছেন- বাংলাদেশ এখন ঋণের ফাঁদে আটকা পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যাংক ধ্বংস করে দিয়েছে। শেয়ারমার্কেট ধ্বংস করে দিয়েছে। মেগা-প্রজেক্টের নামে মেগা লুটপাট চলছে। এই অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে সংগঠিত করতে হবে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘সিইসি একজন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত একটি হজ ব্যবস্থাপনা টিমের সঙ্গে হজ তত্ত্বাবধানের জন্য সৌদি আরবে যাচ্ছেন। তিনি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারেন না, তাই এখন হজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে চাই- এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সম্মানীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদার মুক্তি ও হাসিনার পতন একইসূত্রে গাঁথা। সরকার জামিন না দিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। খালেদা জিয়াকে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজা দেওয়া হয়। অথচ সেই টাকা ব্যাংকেই আছে। এখন তা সুদে আসলে ৬ কোটি টাকা হয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আহমদ বলেন, ‘এ সরকার দাবি করে বিএনপিকে তারা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। বিএনিপকে ধ্বংস করা সরকারের এজেন্ডা। কিন্তু শতবছরেও তা তারা পারবে না। প্রতিদিন দেশে ৬-৭ জন শিশু ধর্ষিত হয়। আদালত, পুলিশ কীভাবে চলে এটা তার প্রমাণ।’
তিনি ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করে এজন্য পদত্যাগের দাবি করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে পারলেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। কারণ শেখ হাসিনা এখন বিচারপতি, তিনিই পুলিশের আইজি, দুদকের চেয়ারম্যান। কাজেই যারাই খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা হবে, তাদেরকেই ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিচার পাবার সম্ভাবনা নাই। তাই তার মুক্তির জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিচার পাব না জেনেই বিচার কার্যে গিয়েছি। নির্বাচনে ভোট চুরি হবে জেনেও নির্বাচনে গিয়েছি। কারণ বিশ্ব যাতে জানতে পারে আমাদের অধিকার চুরি হয়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ