Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালেদার জন্য কী করছে ২০ দল, ঐক্যফ্রন্ট ও মুক্তিমঞ্চ?


২১ জুলাই ২০১৯ ০৮:০০

ঢাকা: খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য নেতার মুখে বার বার উচ্চারিত হয়েছে, ‘ম্যাডামকে কারাগারে নিলে, আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করব।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতা স্বেচ্ছায় কারাবারণ করেননি। কেবলমাত্র খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী ফাতেমা তাঁকে দেখাশোনার জন্য স্বেচ্ছায় কারাগারে রয়েছেন।

কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার ঘোষণা অসংখ্যবার উচ্চারিত হয়েছে মিত্রদের মুখে। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, গোলটেবিল আলোচনা ও সেমিনারে এসব ‘হুংকার’ বেশি শোনা গেছে।

বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ নামে সম্প্রতি নতুন একটি মঞ্চও গঠন করেছেন একজন। তবে ‘দল’, ‘জোট’, ‘মঞ্চ’, কারও পক্ষ থেকেই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কোনো কর্মসূচি এখন পর্যন্ত আসেনি। বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পরে ২০ দলীয় জোট থেকে অন্তত তিনটি দল বেরিয়ে গেছে। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।

সঙ্গত কারণেই বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থকরা প্রশ্ন তুলছেন, ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং নবগঠিত জাতীয় মু্ক্তিমঞ্চ কী করছে খালেদা জিয়ার জন্য? এসব জোট এবং মঞ্চের শরিক দলগুলো শুধুই কি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে? ধানের শীষের ভোটব্যাংক কাজে লাগিয়ে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ঐক্য করেছে?

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জাতীয় মুক্তিমঞ্চ মিলে এই মুহূর্তে ২৬টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। ২০ দলীয় জোটে রয়েছে বিএনপি, মকবুল আহমাদ নেতৃত্বাধীন জামায়াত, মাওলানা আব্দুর রকিব নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, মাওলানা ইসহাক নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, শায়খ আব্দুল মমিন ও মুফতি ওয়াক্কাস নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুটি অংশ, কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রমের এলডিপি, সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তফা জামাল হায়দার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), এ এইচ এম কামরুজ্জামান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ নেতৃত্বাধীন পিপলস লীগ, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নেতৃত্বাধীন এনপিপি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

বিজ্ঞাপন

অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী, কারী আবু তাহেরের এনডিপি, শাওন সাদেকী নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, সাইফুদ্দিন মণির ডেমোক্রেটিক লীগ, সাঈদ আহমেদ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, এহসানুল হুদার জাতীয় দল, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, রিতা রহমান নেতৃত্বাধীন পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি) এবং আবু তাহের চৌধুরীর ইসলামিক পার্টি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে রয়েছে বিএনপি, ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আব্দুর রব নেতৃত্বাধীন জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য।

আর ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতসহ চারটি দল নিয়ে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম গড়ে তুলেছেন ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ নামে আলাদা একটি প্ল্যাটফর্ম। গত ২৭ জুন জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আত্মপ্রকাশের সময় জোটের প্রধান উদ্যোক্তা অলি আহমদ বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি-ই জাতীয় মুক্তিমঞ্চের প্রধান লক্ষ্য।’

কিন্তু এ জাতীয় মুক্তিমঞ্চ গঠনের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি অলি আহমদ বীর বিক্রম। বরং আত্মপ্রকাশের পর চট্টগ্রাম ও সিলেটে দুটি অনুষ্ঠান করে বিএনপির সমালোচনায় মুখর ছিলেন মঞ্চের নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি জোটে থাকা শরিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াত ছাড়া আর কারও পক্ষে রাজপথে কর্মসূচি পালন করার মত সামর্থ নেই। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর সেই জামায়াতও এখন আর মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে না। বাকি দলগুলো মূলত এক ব্যক্তি নির্ভর। তাদের পক্ষে আলাদাভাবে কিছু করে দেখানোর সুযোগ একেবারেই সীমিত।

তারপরও যার যার সামর্থের মধ্যে থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পৃথক কর্মসূচি দিতে পারত তিন জোটের শরিকরা— এমনটিই বলছেন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, নির্বাচনের আগে যে যেসব দাবির ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। কিন্তু নির্বাচনের পরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোনো কর্মসূচিই দেয়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যতগুলো কর্মসূচি পালন করেছে, তার সবগুলোতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ছিল। তাছাড়া ঐক্যফ্রন্ট প্রধান শক্তি হলো বিএনপি। তাদের সব কর্মসূচিই তো খালেদা জিয়াকে ঘিরে।’

২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত জোটের বৈঠকগুলোত সবাই একমত হয়েছে যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে জোটগত ও পৃথকভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবে। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে। সবার সামর্থ্য তো আর এক না।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম/টিএস

আওয়ামী লীগ ঐক্যফ্রন্ট খালেদা জিয়া বিএনপি মুক্তিমঞ্চ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর