বন্যা মোকাবেলায় জাতীয় সংলাপ অপরিহার্য: ড. কামাল হোসেন
২২ জুলাই ২০১৯ ১৪:৫২
ঢাকা: বন্যা মোকাবেলায় জাতীয় সংলাপ অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এই ধরনের সমস্যার সময় সবাইকে নিয়ে বসা দরকার। বন্যাকবলিত এলাকার লোক, দেশের লোক— দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক সঙ্গে বসা দরকার। সব তথ্য একখানে এনে মূল্যায়ন করা দরকার।’
‘আমি মনে করি বন্যার জন্য অবশ্যই একটা জাতীয় সংলাপ অপরিহার্য। বন্যা কেন হয়, কিভাবে হয়, বন্যা থেকে বাঁচার জন্য করণীয় কী? এসব বিষয় চিহ্নিত করার জন্য একটা জাতীয় সংলাপ অবশ্যই প্রয়োজন’— বলেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।
তিনি বলেন, ‘দেশে কার্যকর গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের মানে হলো— জনগণ দেশের মালিক। মালিককে সব কিছু জানাতে হবে। সব ধরনের তথ্য মালিককে দিতে হবে। মালিককে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সব ধরনের নীতিনির্ধারণী জায়গায় বন্যার কথা থাকে। বন্যা মোকাবেলায় যথাযথ বরাদ্দ, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা থাকে। কিন্তু সেগুলো কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না? সমস্যা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নাকি বাস্তবায়নের জায়গায়? চলুন, সেই জায়গাগুলো আমরা চিহ্নিত করি।‘
বন্যা মোকাবেলায় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, অন্যকে দোষারোপ করারে চেয়ে চিহ্নিত করি কারণগুলো। কোথায় ঘাটতি রয়েছে? কোন পর্যায়ে ঘাটতি রয়েছে? সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জায়গায় যে লোকজন আছে, তাদের যা করার কথা তা তারা করছে কি না। চলুন, আমরা দলীয় সংকীর্ণতার জায়গা থেকে সরে আসি। পাল্টা-পাল্টি দোষারোপের জায়গা থেকে সরে আসি। কারণ, পাল্টা-পাল্টি দোষারোপের ফলে সমস্যা সমাধান কঠিন হয়ে যায়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন কত ভয়াবহভাবে আমরা আক্রান্ত হয়েছি বন্যায়। সেই স্বাধীনতার পরই আমরা চিহ্নিত করেছি যে, বন্যা হলো আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এটা ঠিক মতো মোকাবেলা করতে না পারলে আমাদের বিশাল বড় ক্ষতি হয়। লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ ৪৮ বছর পর আমরা দেখছি আমাদের ঘাটতি আছে।’
‘এই ঘাটতি মোকাবেলায় আমাদের একটি ঐক্যমত গড়ে তোলার প্রয়োজন। আমাদের যে বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদেরকে ভাবতে হবে যে, বন্যা আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বন্যা হলে কত লাখ মানুষ গৃহহারা হয়, কত লাখ মানুষ অসহায় অবস্থায় চলে যায়, বাড়ি-ঘর হারায়, ফসল হারায়, হাজার হাজার বিঘার ধান-পাট নষ্ট হয়’— বলেন ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ক্ষতির শিকার আমরা বহুকাল ধরে হয়ে আসছি। স্বাধীনতার আগে, স্বাধীনতার পরে। এখন আমরা একবিশং শতাব্দীর দিকে যাচ্ছি। এখন আমরা যেন গর্ব করে বলতে পারি, স্বাধীন বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণে আমরা এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি যে, বন্যার কারণে আমাদের দেশের কোনো মানুষ আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।’
গণতন্ত্র ঠিক মতো চললে সব মানুষকে জাতীয় সংকটে অংশগ্রহণ করানো সম্ভব উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশকে বাঁচানোর জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। এই বন্যা থেকে বাঁচার জন্যও আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ বন্যা মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। পদক্ষেপগেুলোর মধ্যে রয়েছে— অবিলম্বে বানভাসী মানুষের নিরাপদ জীবন ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা; খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করা; বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি; নদী খনন ও জবাবদিহীতার ভিত্তিতে রিলিফ কমিটি গঠন; বিপন্ন মানুষের জন্য তড়িৎ গতিতে ত্রাণ তৎপরতা ও তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য কার্যকর কর্মপন্থা গ্রহণ; অধিকতর বন্যাকবলিত এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা এবং বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান এমনকি প্রয়োজন হলে চীনের সঙ্গে একত্রে আঞ্চলিক উদ্যোগে পানি সমস্যার সমাধান করা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাঈদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহসীন রশীদ, মেসবাহ উদ্দীন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দীন, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ।
সারাবাংলা/এজেড/এটি