ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার, পুনবার্সনে পাশে থাকার ঘোষণা আ.লীগের
২২ জুলাই ২০১৯ ২১:১৮
ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে জোরদার ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা ঘর-বাড়িতে ফেরার ফিরলেও ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
সোমবার (২২ জুলাই) থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে দলের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা শুরু হয়েছে। একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইতোমধ্যে গত কয়েকদিন থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে আসা বেশকিছু নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের মাঝে সরকার ও স্থানীয়ভাবে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম গতিশীল করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ছয়টি টিম গঠন করা হয়েছে। আজ থেকে সারাদেশে এসব টিমের নেতারা বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম গতিশীল ও মনিটরিং করতে মাঠে নেমেছে।
ত্রাণ কার্যক্রমের বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সরকার একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ছয়টি টিম বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। বন্যার পানি নেমে গেলে যারা গৃহহীন আছে তাদের পুর্নবাসনের জন্য সরকার এবং দলের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকে আমরা কুড়িগ্রামের উলিপুর, চিলমারী এবং কুড়িগ্রাম সদরের ত্রাণ বিতরণ করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না বন্যা দুর্গতরা নিজেদের ঘরে ফিরতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চলবে। ঘরে ফেরা পরও সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তা বন্যা দুর্গতদের জন্য করা হবে।’
ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে ত্রাণ কার্যক্রম জোরালোভাবে শুরু করেছি। আগামীকাল সকালের দিকে আমাদের একটি টিম মানিকগঞ্জের বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। আজকেরও আমাদের দুটি টিম কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জসহ বগুড়ায় ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছে। শীঘ্রই বন্যা দুর্গত বাকি জেলাগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের নেতারা ত্রাণ বিতরণে অংশ নেবে।’
কুড়িগ্রামের স্থানীয় প্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, বন্যা ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক হাজার পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল, সয়াবিন তেল, ডাল, আলু, শুকনো খাবারসহ খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় সরকারিভাবে ৮০০ মেট্রিক টন চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে আজ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিমের অংশ হিসাবে জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ বিতরণ শেষে জাহাঙ্গীর কবির নানক বন্যা দুর্গত জনগণকে অভয় দিয়ে বলেন, আপনারা যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের পাশে বাংলাদেশ সরকার তথা আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা ভয় পাবেন না। বন্যার পানি চলে গেলে পরবর্তীতে আপনাদের বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া হবে। আপনাদের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় থাকবেন এবং মনিটরিং করবেন। কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের জন্য অনেক আগে থেকে ব্যবস্থা করে রেখেছেন যাতে বন্যায় আমার দেশের মানুষের ক্ষতি হলে তা যেন আপনারা পুষিয়ে নিতে পারেন।
এসময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য একটি টিম সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেয়। দুপুরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মাইঝবাড়ীতে বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামিম, বগুড়ার ধুনট-শেরপুর আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মো. ফারুক আহম্মদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৩ জুলাই বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি জোরদার করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ছয়টি টিম গঠন করে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর যৌথসভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীকে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই