অবস্থান চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর হবেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
২৩ জুলাই ২০১৯ ১৫:৪৮
ঢাকা: রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন-ভাতা, পেনশন চালুসহ বকেয়া বেতনের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাও করে আমরণ অনশন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। গত ১৪ জুলাই রোববার থেকে ৩২৮টি পৌরসভার কয়েক’শ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী দাবি আদায়ে প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে টানা দশম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) তারা এসব কথা জানান।
অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার সচিব আব্দুল আলীম মোল্লা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে আমাদের বৈঠকের কথাও রয়েছে। আমাদের দাবিগুলো যদি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আমরণ অনশনে যাবো। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়, সচিবালয় ঘেরাও করবো। তবু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি থেকে সরে আসবো না।’
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া প্রায় ২১ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ ডেঙ্গুতে ভুগছেন, কেউ প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই আন্দোলনের নেতা ও পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের সহ-সভাপতি আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বেতন হয় পৌরসভা থেকে। কিন্তু পৌরসভার মেয়ররা জানান, পৌরসভার আয় পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। ফলে দীর্ঘ কয়েক মাস আমাদের বেতন-ভাতা আটকে আছে। সরকার আমাদের চাকরি দেয়, আমাদের বদলি করে, শুধু বেতন দিতে পারে না। আমরা চাই আমাদের বেতন-ভাতা ও পেনশন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যবস্থা করা হোক। দাবি আদায়ের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাথার উপর ছাউনি টাঙ্গিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন পৌরসভা থেকে আসা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। টানা দশম দিনের মতো রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েক’শ নারী পুরুষ দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচন্ড গরমে শুয়ে বসেই ‘দাবি মোদের একটাই, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা চাই’, ‘ব্রিটিশ আইন বাতিল কর, পৌরসভা আইন কার্যকর কর’ সহ দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া স্বরূপকাঠি পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছি না। পরিবারের কাছে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে থাকে। ছেলেমেয়ের পরীক্ষার ফি দিতে পারি না, জামাকাপড় কিনে দিতে পারি না। এলাকার দোকানদাররা আমাদের দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমরা তো অন্যায্য দাবি করছি না, আমাদের দাবি পূরণ করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে ঈদুল আজহা। আপনারা সবাই কোরবানি দিবেন, আমাদের সেই বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু আমরা কোরবানি দিতে পারবো না। এটা কেমন বিচার? সরকারি আর কোন খাতে এমনভাবে কর্মচারীদের অবহেলা করা হচ্ছে আমাদের জানা নেই।’
এদিকে, পৌর কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে দেশের বিভিন্ন পৌরসভার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, এটা কতোটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব আব্দুল আলীম মোল্লা বলেন, ‘আমরা পৌরসভাবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ফিরে যাওয়ার পথ খোলা নেই। এবার নিয়ে আমরা দশম বারের মতো আন্দোলনে এসেছি। দাবি আদায় হলে প্রয়োজনে আমরা শুক্র-শনিবার কাজ করে পৌরবাসীর ক্ষতি পুষিয়ে দিবো। কিন্তু কাজ করতে হলে আগে আমাদের তো বাঁচতে হবে।’
প্রয়োজনে আমরা রাস্তায় ঈদ করবো, এখানেই কোরবানি দিবো। আমরা আশা করছি সরকার আমাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সহমর্মিতা জানাবে, বলেন আন্দোলনকারীরা।
সারাবাংলা/ওএম/এমও
দশম দিনের আন্দোলন পৌর কর্মকর্তা কর্মচারী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা