জাতীয়করণের দাবি: আন্দোলনের ৩৮ দিনেও নেই বাস্তবায়নের আশ্বাস
২৩ জুলাই ২০১৯ ১৬:৩৭
ঢাকা: শিশুটির বয়স ৭ মাস। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে, আবার কখনো থেমে থেমে কাঁদছে। তার মায়ের নাম নূর নাহার। তিনি উত্তরগঞ্জ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বেসকারি বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের দাবিতে চলমান অনশন কর্মসূচিতে তিনিও অংশ নিয়েছেন।
জানালেন, ‘দুধের শিশুকে নিয়ে আন্দোলনে কে আসতে চায়? কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। দাবি আদায় না হলে আমরা ফিরে যেতে পারবো না। আমাদের দাবি যৌক্তিক।’
শিক্ষিকা নূর নাহারের মতো আরও অনেক শিক্ষিকাই তাদের বাচ্চাদের নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তাদের দাবি একটাই, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা থেকে বাদ পড়া বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করতে হবে।
গত মে মাসের ১৬ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হওয়ায় গত ৩ জুলাই থেকে আমরণ অনশন পালন করছেন তারা। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৩৮ দিন, এখনো দাবি আদায় হয়নি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। টানা ৩৮ দিনে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলনের ফলে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে গেছেন। ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ জন, ইতোমধ্যে মারা গেছেন একজন। অনেকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি চলে গেছেন, আবার অনেকে অসুস্থতা নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
জন্ডিস নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মধ্যজয়পুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রনব বড়াল। তবু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন ছেড়ে যাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। ফুটপাতে শুয়ে বসেই বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘চাকরি আছে বেতন নাই, এমন রাষ্ট্র কোথাও নাই’; ‘মা ভাত চাই’; ‘বেসরকারি প্রাইমারি, করে দাও সরকারি’; ‘রাস্তায় শুয়ে শিক্ষক, নহে ওরা ভিক্ষুক’; ‘ভিক্ষা চাই না যৌক্তিক দাবি জাতীয়করণ চাই’ সহ স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়রসহ সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান আলী সাজু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণের দাবি করে আসছি। দাবি আদায়ের জন্য প্রথমে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিলাম। এরপর প্রতীকী অনশনের ডাক দেই। প্রতীকী অনশন থেকে আমরা অনশনে যাই। দীর্ঘ ৩৮ দিন ধরে এখানে অবস্থান করছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। আমাদের দাবিগুলো তাদের সামনে তুলে ধরেছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো কোনো আশ্বাস পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব স্কুল জাতীয়করণ করা হয়নি, সেসব স্কুলের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে শিক্ষাদান করে আসছেন। শিক্ষকদের কোনো উপার্জন না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষককেই স্কুল শেষে বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এমনকি শিক্ষকদের টিউশনি, কৃষিকাজ, রাজমিস্ত্রীর কাজ অথবা ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে উপার্জন করে পরিবারের খরচ যোগাতে হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সারাদেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সে সময় ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলেও ৪ হাজারের কাছাকাছি স্কুল বাদ পড়ে যায় সেই তালিকা থেকে। তখন থেকেই বাদ পড়ে যাওয়া ৪ হাজার স্কুল জাতীয়করণের দাবি তুলে আসছেন শিক্ষকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ১৮ দিন প্রেসক্লাবের সামনে তারা অবস্থান নেয়। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাদের জানানো হয়, এ বিষয়য়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু একবছরের বেশি সময়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আবারও প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষকরা।
সারাবাংলা/ওএম/এমআই