জুলাই মাসেই ঢামেকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ৯১১, মৃত্যু ৩ জনের
২৪ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৯
ঢাকা: গত এক মাসের ব্যবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাতগুণ। এ বছরের জুন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন ১৩৪ জন। আর জুলাই মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ৯শ ১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর বর্তমানে ৩শ ৯৩ জন রোগী ভর্তি আছে হাসপাতালটিতে।
সোমবার (২৩ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারি পরিচালক নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরমধ্যে সোমবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে আজ মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টাতেই ৯৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৮০ শতাংশের বেশি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত রোগীদের জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। সাধারণ জ্বর মনে করে অনেকেই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। হাসপাতালে দেরি করে পরীক্ষা করাতে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের চার ধরনের ভাইরাস আছে। এছাড়া যাদের উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ ও লিভারে সমস্যা রয়েছে, তাদের ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এ ধরনের রোগীদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
ডা. রোবেদ আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা যেন বংশবিস্তারের সুযোগ না পায়, সে জন্য প্রত্যেকের নিজের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এর আগে, গত শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দুইদিনে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১শ ৬৯ জন। এর মধ্যে ছুটির দিন শুক্রবারেই ভর্তি হয় ১শ ১১জন।
হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, গত জুন মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১৩৫ জন। এর মধ্যে একজন রোগী মারা গেছে। বাকি ১৩৪ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। কিন্তু চলতি জুলাই মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ৯শ ১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এর মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন ও ৫১৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
এদিকে, গত শনিবার বেলা ১১টায় হাফিজা বেগম (৬১) নামের এক নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত মারা যান। তিনি গত ১৩ জুলাই কামরাঙ্গিরচর এলাকা থেকে হাসপাতালে ভর্তি হন।
এরপর গত রোববার ভোরে মারা যান রাকিবুল ইসলাম রাজু (১৮) নামের এব যুবক। তিনি ডেমরা সারুলিয়া এলাকায় থাকতেন। গত ১৮ জুলাই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট চারজন রোগী মারা গেল।
রাজুর বড় ভাই রাহাতুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, রাজু গুলশান এলাকায় স্যামস্যাংয়ের শোরুমে চাকরী করতেন। গত ১৫ জুলাই রাজুর জ্বর হয়। কিন্তু তিনদিন পরও জ্বর কমছিলো না। পরে বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করালে তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে।
রাহাত বলেন, ১৮ জুলাই রাজুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে বেড খালি না থাকায় ফ্লোরে রাখতে হয় তাকে। হঠাৎ করে গতকাল সকাল থেকে রাজুর মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। আমরা ডাক্তারের কাছে দৌঁড়ে গেলে তারা বলেন নার্সের কাছে যান। নার্সরা বলে, ডাক্তারের কাছে যান। এভাবে কয়েকবার এখান থেকে সেখানে ঘুরতে থাকি আমরা।
রাহাত অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তার আর নার্সদের অবহেলায় আমার ভাই রাজু মারা গেছে। গতকার রক্তের প্লেটলেট পরীক্ষার জন্য দিলে ৬ তলা থেকে ২য় তলায় যাই পরীক্ষা করতে। সেখান থেকে বলে পরীক্ষার জন্য রোগীকে আনতে হবে। রোগী আনা সম্ভব না বললে তারা জানায় তাহলে অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে কমপক্ষে ২০ বার উঠানামা করতে হয়েছে আমাদের। ওদের অবহেলার কারণেই আমার ছোট ভাই রাজু মারা গেছে।
সারাবাংলা/এসআর/ওএম/জেডএফ