Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিপলসের পাওনা আদায় সাপেক্ষে আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ


২৪ জুলাই ২০১৯ ২২:৩১

ঢাকা: বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলস লিজিংয়ে পাওনা টাকা আদায় করে আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান।

বুধবার (২৪ জুলাই) বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার কার্যালয়ে সারাবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমানতকারীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। আগে হাতে টাকা আসলে তারপর তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। হাতে টাকা না আসলে আমি কিভাবে তাদের পাওনা পরিশোধ করবো?’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘পিপলস লিজিংয়ের অ্যাসেট বলতে তেমন কিছু নাই। সম্পদ বলতে রয়েছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্যারামাউন্ট হাইটসে মোট ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের ২টি ফ্লোর, কয়েকটি গাড়ি এবং নগদ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পিপলসের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ঋণ। এই ঋণ তাদের মূল অ্যাসেট। এটা আদায় করতে হবে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের ট্যাক্স বাবদ পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে এবং দৈনিক মুজুরির ভিত্তিতে কেউ থাকলে তাদের ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করা হবে। এই চার শ্রেণির অর্থ অগ্রাধিকার হিসাবে পরিশোধ করা হবে। পরিশোধকারীদের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করার সামর্থ্য না থাকলে আনুপাতিক হারে সবাই কম পাবে।’

তিনি বলেন, ‘কোম্পানির আমানতকারীদের মধ্যে সবার আগে ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীর। যদিও আমানতকারীর ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানিকের মধ্যে কারটা আগে হবে তা বলা নাই। তবে আমরা ব্যক্তিশ্রেণির তথা সাধারণ মানুষের টাকা আগে পরিশোধ করবো। এদের মধ্যে আবার যারা ক্ষুদ্র আমানতাকারী বা কম টাকা পাবেন তাদের অগ্রধিকার দেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবেন না। এটা বিনিয়োগকারী হোক আর উদ্যোক্তা পরিচালক হোক, সবাই এর মালিক। তবে আগের ধাপে সবার টাকা পরিশোধ করার পর যদি অবশিষ্ট থাকে তখন তারা পাবেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম বলেন, ‘দায়-দেনা আদায় ও পরিশোধের একটি অবসায়কের হিসাব খোলা হবে। এই হিসাব থেকেই পরবর্তী সময়ে সব লেনদেন করা হবে। কেউ টাকা জমা দিলে এই হিসাবে জমা হবে। আবার কারও পাওনা থাকলে তাকেও এই হিসাব থেকে টাকা দেওয়া হবে।’

কোম্পানির খেলাপি ঋণ উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ঋণ অ্যাসেট আদায় করতে হবে। এটা আদায় করা কঠিন বা সোজা তা বড় কথা নয়। এতদিন পিপলস লিজিং একটা ফরমেটে ছিল এখন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আসছে। ফলে টাকা পরিশোধ না করে ছাড় পাওয়া সবার জন্য একটু কঠিন। এতদিন ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করলেও এখন সে সুযোগ কম। তাদেরকে কোর্ট ডেকে হাজির করা হবে। সে ঋণ খেলাপি হোক আর নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারীই হোক সবাইকে টাকা পরিশোধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘পিপলস লিজিং থেকে আমাকে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির দেনা-পাওনা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ, দেনার পরিমাণ এবং সম্পদ কোথায় কার কাছে রয়েছে তার বিস্তারিত থাকবে। ওই প্রতিবেদনটিই হবে আমার মূল ভিত্তি। সেটা দিয়ে আমি কাজ শুরু করব। গত ২১ জুলাই আমি তাদের কাছে এই প্রতিবেদন চেয়েছি। সেটা দিতে হয়ত কিছুদিন সময় লাগবে। ’

‘আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করতে কতদিন সময় লাগতে পারে?’- এমন প্রশ্নের জবাবে অবসায়ক বলেন, ‘এটা বলা সম্ভব নয়। কারণ পিপলসের কোনো ক্যাশ নাই বললেই চলে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির পাওনা টাকা যত তাড়াতাড়ি আদায় করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি আমানতকারীদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঋণ খেলাপি কিংবা নিয়মিত ঋণ বুঝি না। পিপলস লিজিং যেখানে টাকা পাবে আমরা সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে তা আদায়ের ব্যবস্থা করব। ’

তিনি আরও বলেন, ‘পিপলসে আমানতকারী ও ঋণ গ্রহণকারী উভয়ের আমানত ও দায়-দেনা পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। আমানতাকারীদের স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করার দরকার নাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পিপলসের অবসায়ন সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার খরচ, অবসায়কের অফিস খরচ, স্টাফের বেতন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল প্রতিষ্ঠানটির হিসাব থেকে পরিশোধ করা হবে।’

এর আগে গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। আর ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আবেদন করলে আদালত বাংলাদেক ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে সাময়িকভাবে অবসায়ক নিয়োগ দেন। সর্বশেষ ১৫ জুলাই ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।

পিপলস লিজিংয়ের অর্থিক অবস্থা: পিপলস লিজিংয়ে বর্তমানে আমানত ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা হলো ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানত। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নেওয়া অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। লোকসানের কারণে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লভ্যাংশ দিতে পারছে না। তবে আমানতের বিপরীতে কাগজে কলমে গত ৩১ ডিসেশ্বর ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার সম্পদ দেখা হলেও বাস্তবে তা তিন ভাগের এক ভাগও নেই বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালেল ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন লাভ করে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

টপ নিউজ পরিশোধ পাওনা পিপলস লিজিং

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর