আগে ওষুধ ছিটালে ঘরেও ঝাঁজ পেতাম, এবার গন্ধও পাই না: হাইকোর্ট
২৫ জুলাই ২০১৯ ১৪:১৫
ঢাকা: রাজধানীর মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যবহার করা ওষুধের সমালোচনা করেছেন হাইকোর্ট। সাধারণ মানুষও এই ওষুধকে বিশ্বাস করতে পারছে না বলে মনে করেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এক শুনানিতে এসব কথা বলেন।
গত সোমবার (২২ জুলাই) ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ না হওয়ায় দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হন ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন।
এসময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশে বলেন, ‘এ বছর অ্যালার্মিং সিচ্যুয়েশন কেন হলো? এক্ষেত্রে কী সমস্যা, তা কি চিহ্নিত করেছেন?’
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘চিন্তা করতে হবে। নিঃসন্দেহে বিষয়টা সবার হেলথ কনসার্ন। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনই বলুক, সেটাই ভাল হয়।’
এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার এই সিটি করপোরেশনে এক কোটির বেশি লোক। আর ১০টি জোনে ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমে জনবল মাত্র ৪২৯।’
তখন আদালত বলে, ‘এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এত কেন?’
এক সপ্তাহের মধ্যে মশা নিধনে সঠিক ওষুধ চাই: হাইকোর্ট
জবাবে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। ক্লাইমেট সেনসেটিভ ডিজিজ। আর এ বছর আমাদের দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ও সর্বোচ্চ উষ্ণতা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ভয়াবহ প্রভাব চলছে। সব দেশেই তো ডেঙ্গু আছে।’
এ সময় তিনি কয়েকটি দেশের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা তুলে ধরেন।
আদালত বলেন, ‘ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না কেন? গত বছর ওষুধ ছিটালে ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা হচ্ছে এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না। টিভিতে দেখলাম সড়ক মন্ত্রী বললেন এবারের ওষুধ কাজ করছে না। এর আগে তো কেউ স্বীকারই করেনি।’
তখন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখনই ওষুধ আনি তখনই সরকারি দুটি ল্যাবে টেস্ট করে পজেটিভ সার্টিফিকেট পেলেই ব্যবহার করি। অর্থাৎ ল্যাব পরীক্ষায় সন্তোষজনক বললে ব্যবহার করি।’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘যখন দেখলেন ওষুধ কাজ করছে না তখন অন্য জায়গায় দ্রুত টেস্ট করবেন না? এসব কি আমাদের বলে দিতে হবে? হোয়াট ইজ দ্য প্রবলেম? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশের স্বাস্থ্য দেখবে। এগুলো আমরা দেখতে চাই না। অবস্থা যেরকম যাচ্ছে এটা কেবল সিটি করপোরেশনের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে।’
জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখন তৃতীয় ল্যাবে টেস্ট করতে দিয়েছি। কৃষি গবেষণাতে।’
এরপর উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ‘আমরা পুরো ওষুধটাই চেঞ্জ করব। এজন্য একটি কারিগরি কমিটি করেছি। সমস্যা হচ্ছে, পিপিপি’র মাধ্যমে এটা করতে হয়। সেখানে অনেক সময় লাগে। তবে ডিপিএম’র মাধ্যমে কিনলে তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো।’
এ প্রক্রিয়ায় কতদিন সময় লাগবে আদালত তা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চান।
তখন আদালত বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ আনবেন। আমরা আদেশ দেব। আমরা ওষুধ চাই। কী প্রক্রিয়ায় আনবেন সেটা হলফনামা আকারে আপনার আইনজীবীকে দিতে বলেন। সারা দেশের মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত। ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত। সবাই যদি হাসপাতালে যেত তাহলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতো।’
এরপর আদালত দুপুরের মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ আনা হবে তা হলফনামা আকারে জানাতে বলেন।