বেডের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররাও
২৬ জুলাই ২০১৯ ১০:৪০
ঢাকা: রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা শহরগুলোতেও ডেঙ্গু আতঙ্ক মহামারি আকার ধারণ করেছে। কেউ শরীরে সামান্য একটু জ্বর বোধ করলেই চেক আপের জন্য ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালে। হতে পারে এটি সাধারণ জ্বর বা অন্য কিছু। কিন্তু বর্তমানে কেউ এটাকে সাধারণভাবে নিচ্ছেন না। কারণ এবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন কেউ কেউ। তাই একটু জ্বর ওঠা মাত্রই হাসপাতালের দিকে ছুটছেন রোগীরা।
এদিকে হাসপাতালের বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসাপাতালে সরেজমিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এখানকার চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সে পরিমাণে ডাক্তার বা নার্স নেই। এজন্য তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগী বেশি হওয়ায় তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা, চিকিৎসকের চেম্বার এবং লিফটের সামনে থেকে শুরু করে বাথরুমের দরজা পর্যন্ত সর্বত্র রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শত কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা। এ বিষয়ে কথা হয় মিটফোর্ড হাসাপাতালের চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী আলতাফ মিয়ার সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুইদিন আগে মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১-৩-৫-৭ ইউনিটে ভর্তি হয়েছি। ভর্তি হওয়ার সময় কোনো বেড পাইনি। এজন্য ফ্লোরে বেড পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। যেভাবে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছে তাতে কারও কিছুই করার নেই। সব হাসপাতালে একই অবস্থা। হাসপাতালে বেডের চেয়ে রোগী বেশি।’
২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ভর্তি ৫৩৬ ডেঙ্গু রোগী, ঢাকার বাইরে ১১
একই বিভাগের সিনিয়র নার্স সাথী হালদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই ইউনিটে ডেঙ্গু আক্রান্তসহ ১৭২ জন রোগী রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় এখানে ৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আগের রোগীসহ নতুন রোগী যোগ হওয়ায় আমরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৪ ঘন্টায় ৬/৭ জন নার্স চিকিৎসা দিয়ে আসছে। সকাল থেকে চিকিৎসক বেশি থাকলেও নাইট শিফটের জন্য মাত্র দু’জন নার্সকে দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’
মিটফোর্ড হাসাপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে এখন ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাছাড়াও প্রতিদিন ৬৫/৭০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আর প্রতিদিন চিকিৎসা শেষে ৩০/৪০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল ছাড়ছেন।
মিটফোর্ড হাসাপাতালের ৩ নম্বর ভবনের সিনিয়র এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, রোগীর তুলনায় ডাক্তার-নার্স অনেক কম। চিকিৎসক/নার্সের সংখ্যা বাড়ানো বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। অন্যান্য রোগীর চেয়ে ডেঙ্গু রোগীকে বেশি সময় দিতে হয়। একটুও বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাচ্ছি না। সত্যিই ডেঙ্গু যেন আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাদারীপুর থেকে ছেলে সাগর আলীর (১৬) ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা করানোর জন্য লাইজু আক্তার (৪৫) মিটফোর্ড হাসাপাতালে এসেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুইদিন আগে থেকে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় আছি। আজকে নার্স বলেছে ভিতরে মেঝেতে সিট করে দিবে। চিকিৎসা ভালোই হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে মানুষ অনেক বেশি। ’
মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতি ২০ রোগীর মধ্যে তিনজন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই তাদের ভাল চিকিৎসা হচ্ছে।
ডাক্তার-নার্স সংকট ডেঙ্গু রোগী বেড নেই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসাপাতাল