আবারও বৃষ্টি, আবারও বাড়ছে পানি
২৬ জুলাই ২০১৯ ১৬:৫৬
ঢাকা: কয়েকদিনের বিরতিতে আবারো শুরু হয়েছে বৃষ্টি। অব্যাহত পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নতুন করে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা, বগুড়ায় যমুনা ও বাঙ্গালী এবং গাইবান্ধায় দুই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ২শ ৫০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে গাইবান্ধা জেলাতেও বেশ কয়েকটি অঞ্চল নতুন করে তলিয়ে গেছে। জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি একই রকম রয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই জেলার সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলাটির চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল নতুন করে তলিয়ে গেছে।
দ্বিতীয় দফার বন্যার কারণে কুড়িগ্রামের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তুমুল খাদ্য সংকটের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। রাস্তাঘাট ও তৃণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্যও পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ উঁচু রাস্তায় কিংবা স্কুল কলেজের ছাদে দিনাতিপাত করছে।
কুড়িগ্রামে বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। যাদের মধ্যে ১৩জন শিশুও রয়েছে। এদের বেশিরভাগই পানিবাহিত রোগে, সাপের কামড় খেয়ে ও পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এছাড়া, রংপুর বিভাগে গত ১৫ দিনে ৩৩ জন মারা গেছেন।
উত্তরবঙ্গের আরেক জেলা লালমনিরহাটে দ্বিতীয় দফা বন্যায় আটকে পড়েছে পাঁচটি উপজেলার সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে এই জেলায় নদী ভাঙনও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
জামালপুরে যমুনার পানি বাড়লেও বন্যা পরিস্থিতি আগের মতই অপরিবর্তিত রয়েছে। এই জেলার ২৫ হাজার ৯শ হেক্টর ফসলি জমি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ১২৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।
ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে গাইবান্ধায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি আবারও বেড়েছে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমার ৫৩ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবারসহ গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার সাত উপজেলায় পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৭০টি।
উত্তরে মেঘালয় প্রদেশ থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে শেরপুরেও বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ জেলার বেশিরভাগ রাস্তায় পানিবন্দি অবস্থায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য খামারিরা। মৎস্য খামার, দিঘি ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় তাদের ২১ কোটি টাকার মাছ ও মাছের বিভিন্ন প্রজাতির পোনা বানের জলে ভেসে গেছে। এছাড়া, এই জেলায় প্রায় ৩০ হাজার কৃষক বন্যার পানিতে ফসলি জমি হারিয়ে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পাশের জেলা ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে চরগোবিন্দপুর, চরভবানীপুর, দুর্গাপুরসহ চরাঞ্চলের অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকাতে প্রধানত কৃষক ও মাছের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আবার বৃষ্টি আবারও বাড়ছে পানি নদীগুলোতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে পানি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি