বিদ্রোহী ও বিরোধিতাকারী চিঠি ইস্যু বিলম্ব; সিদ্ধান্ত ২৯জুলাই
২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:২৯
ঢাকা: উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দলের প্রভাবশালী নেতাদের শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আপাতত বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রমের কারণে চিঠি ইস্যুতে বিলম্বিত হলেও আগামী ২৯ জুলাই সকাল ১১টায় পুনরায় সম্পাদকমন্ডলীর সভায় সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে এতথ্য নিশ্চিত করেছে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া কাছে টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
তবে দলীয় সূত্রটি নিশ্চিত করেছে, আপাতত বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রমের চিঠি ইস্যু করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পূর্ব পর্যন্ত অভিযোগকারীদের অভিযোগ জমা নেওয়া হবে। তার আগে আগামী ২৯ জুলাই দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সকাল ১১টায় সম্পাদকমন্ডলীর এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে চিঠি ইস্যুর বিষয়টি কার্যকর করা হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই সিদ্ধান্তের কথা দপ্তর সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন।
এব্যাপারে ২০ জুলাই দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর সাথে সহযোগী সংগঠনগুলোর এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই-বাছাই শেষে ২৮ জুলাই থেকে সাংগঠনিক শাস্তি ইমপ্লিমেন্টেশন শুরু করা হবে বলে জানান। সেদিন তিনি বলেন, যারা উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহ করেছে এবং যারা মদদ দিয়েছে তাদের ব্যাপারে আমরা সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই সিদ্ধান্তের ইমপ্লিমেন্টেশন করবো। এনিয়ে আজকে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি।
আমাদের বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বরত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে টিম আছে, এই দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমগুলো এই কমপ্লেইনগুলো দেখবে। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অফিসে ২০০টির মতো অভিযোগ জমা পড়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই অভিযোগগুলো স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে দিয়ে দিচ্ছি। কারণ কোন অভিযোগ ব্যক্তিগত শত্রুতায় অনেক সময় দিয়ে থাকতে পারে। কাজেই বিষয়গুলো দেখার জন্য তারা দায়িত্ব পালন করবেন ২৭ জুলাই পর্যন্ত। ২৮ তারিখ থেকে আমরা বিভাগীয় টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইমপ্লিমেন্টেশন প্রসেসিংয়ে যাবো। কাউকে শোকজ এবং কাউকে সাসপেন্ড করে শোকজ। আবার কাউকে কারণ দর্শাতে বলা হবে। সেটা কার্যকর বাস্তবায়নের কার্যকারিতা শুরু হবে ২৮ জুলাই থেকে।’
এদিকে গত ১২জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার ও শোকজের সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে যেসব মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতা কাজ করেছেন, তাদেরও কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠাবে আওয়ামী লীগ।
এদিকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ও নৌকার বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ অভিযোগ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ বিভাগওয়ারী করে ফাইলিং করা হয়েছে বলেও জানান সূত্রটি।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এসব অভিযোগে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল ও বিরোধীতার বিষয়টি কোনো উপজেলায় ত্রিমুখী, কোথাও দলীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুঠে উঠেছে। কয়েকটি অভিযোগ সারাবাংলার কাছে এসেছে।
এসব অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সভাপতি বরাবর করা হয়েছে। এতে নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অসহযোগীতার কথা উল্লেখ রয়েছে। নড়াইল জেলার একটি উপজেলায় নৌকার প্রতীকের বিরোধীতার কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়। অভিযোগকারী নৌকার প্রার্থীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘‘আমি……. উপজেলার আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলাম। আমার নির্বাচনী এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই আপনার দেওয়া নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিদ্রাহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারি, আত্মীয় স্বজন ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেয়। ২০শে মার্চ ২০১৯ তারিখ রাতে আমার নিজ ইউনিয়নে নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দিলে তাদের বিপক্ষে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট থানা মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এ বিষয়ে আমি নিজে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘটনার বিস্তারিত জানাই এবং নড়াইল জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তাকেও অবহিত করি।
এছাড়াও স্থানীয় এমপির নিজ কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোট কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেন। ওই কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মাত্র ১০টি ভোট পায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। অভিযোগের বিষয়গুলো উল্লেখ করে অভিযোগকারী আরও উল্লেখ করেন, স্থানীয় এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীদের অসযোগীতায় আপনার দেওয়া নৌকা প্রতীককে আমি জিতিয়ে আনতে পারিনি। আমি মনে করি, এই ধরনের অরাজনৈতিক কর্মকান্ড আপনাকে বা আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় দল আওয়ামী লীগকে হেয় করার একটা প্রয়াস।
এছাড়াও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা, রংপুরের মিঠাপুকুর, দিনাজপুরের তিনটি উপজেলাসহ কুমিল্লা ও নরসিংদীর বেশ কয়েকটি অভিযোগও প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগকারী হিসাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের নাম রয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই এলাকায় সাবেক একজন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৮জন নেতার বিরুদ্ধে। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ ও সাংগঠনিক শৃংখলা ভঙ্গের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের ৫জন সহ-সভাপতি অভিযোগ করেন। জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগকারী হিসাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৮জন নেতার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি বিএনপির