খালেদা জিয়াকে বাঁচতে দিন: রিজভী
২৮ জুলাই ২০১৯ ১৬:৩৩
ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতায় শঙ্কিত দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর আকুতি, ‘তাকে বাঁচতে দিন’।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আকুতি জানান।
সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘আমি বিএনপি এবং গোটা দেশবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে তার পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক। তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে। তাকে বাঁচতে দিন। দেড় বছর তো বিনা অপরাধে সাজা খাটালেন। এবার প্রতিহংসা বন্ধ করুন। তাকে মুক্তি দিয়ে বন্যা-ডেঙ্গু মোকাবিলার চেষ্টা করুন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তার গুরুতর অসুস্থতার কথা জাতির সামনে বারবার তুলে ধরা হয়েছে। অথচ বেগম জিয়ার চিকিৎসা হয়েছে তার ইচ্ছার বাইরে নামকাওয়াস্তে।’
রিজভী বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তীব্র ব্যথা নিয়ে গতকাল দাঁতের চিকিৎসা নিতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। ২০ মিনিট বসিয়ে রেখে তার কী চিকিৎসা করা হয়েছে, আমরা জানি না। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, তীব্র ব্যথায় যন্ত্রণাক্লিষ্ট খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি।’
বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন তার অবস্থা জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের মধ্যে। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণহীন ব্লাডসুগার। জিহ্বার আলসারের কারণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে— যা দিনকে দিন আরও গুরুতর হচ্ছে। ফলে তিনি কিছুই খেতে পারছেন না।’
রিজভী জানান, আর্থ্রাইটিস ও ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যার কারণে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আরও গুরুতর অবনতি ঘটছে। ঘাড়-মাথা সোজা রাখতে পারছেন না। কয়েক বছর আগে অপারেশন করা চোখ এবং হাঁটুর ব্যাথা ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে কষ্টে কাতরাচ্ছেন ‘গণতন্ত্রের মা’।
টেলিভিশনের পর্দায় খালেদা জিয়ার এই অসুস্থতার দৃশ্য দেখার পর অগণিত মানুষ অশ্রুশিক্ত হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘গতকাল শনিবার দেশনেত্রীকে যখন পিজি হাসপাতালে হুইল চেয়ার থেকে নামিয়ে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তখন দুইজনে ধরেও তাকে দাঁড় করাতে পারেনি। কষ্টে কাতরাচ্ছিলেন তিনি। হুইল চেয়ারেও বসতে পারছিলেন না, কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন।’
‘আর দেশনেত্রীর এহেন অসুস্থতায় আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যে আনন্দ ঝরে পড়ছে। বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে সরকারি বার্তাই জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবে বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, কিন্তু সরকার সেটি অগ্রাহ্য করছে’— অভিযোগ রিজভীর।
‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার করছে। গল্পের রাখাল বালকের মত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি আর অবনতি’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতার মধুভাণ্ডার যাতে হাতছাড়া না হয়, এজন্য দেশনেত্রীর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উপহাস করছেন ওবায়দুল কাদের। অথচ কয়েক মাস আগেও পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছিল, সেতুমন্ত্রী জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ে সিঙ্গাপুর থেকে তার চিকিৎসার জন্য এয়ার এম্বুলেন্স ও বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনা হয়েছিল। তিনি ফলোআপ চিকিৎসার জন্য নিয়ম করে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। আমরা কোনো দিন তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উপহাস করিনি।’
‘আমি অসুস্থ হলে বিদেশে নিয়ে যাবেন না, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তুলবেন না, দেশেই আমার চিকিৎসা করাবেন’— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৯ এপ্রিল শের-ই-বাংলা নগরের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের মতো ১০ টাকায় টিকিট কেটে চিকিৎসা নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
‘তারপর চোখের চিকিৎসার জন্য দুই দফা লম্বা ছুটি নিয়ে সূদুর লন্ডন গেলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন তিনি দ্বিতীয় দফায় লন্ডনে, সেটিও নাকি চিকিৎসার জন্য। মানুষ এত দ্রুত কি করে তার অবস্থান পাল্টাতে পারে ! তিনি যা বলেন, করেন তার উল্টা’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।