এডিস মশা নিধনে সমন্বিত অভিযান চায় ১৪ দল
২৮ জুলাই ২০১৯ ১৮:১৭
ঢাকা: আমরা যদি জঙ্গি দমন করতে পারি, মশা নিধন করতে পারব না কেন? জঙ্গির চেয়ে এরা শক্তিশালী হয়ে গেল?- এমন মন্তব্য করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা ধ্বংসের জন্য ওভারসাইড কমিটির মাধ্যমে সমন্বিত অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছে ১৪ দল ও পেশাজীবী নেতারা।
রোববার (২৮জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দল আয়োজিত সামাজিক অবক্ষয় রোধ, ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং দেশব্যাপী গুজবের বিরুদ্ধে মতবিনিময় সভায় এমন আহ্বান জানানো হয়।
১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আপনাদের সাথে আছি। আপনারা নার্ভাস হবেন না। অহেতুক কথা না বলে, অযৌক্তিক অজুহাত সৃষ্টি না করে সমন্বিতভাবে স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করুন। মশক নিধনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। ’
নাসিম আরও বলেন, ‘এখনও সময় আছে। শক্তভাবে সত্যিকারের কার্যকর ওষুধ দিয়ে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মনোভাব নিয়ে সমস্ত প্রশাসনকে কাজে লাগান। এডিস মশার উৎসমূলে আঘাত করুন। ’
মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের অনীহার বিষয়টি তুলে ধরে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মশক নিধনের কাজটি সিটি করপোরেশনের। কিন্তু এই কাজে সবসময় তাদের শৈথিল্য দেখেছি। আমি অতীতেও তাদের নিয়ে বসেছিলাম। তারা মশক নিধনের যে ওষুধ ব্যবহার করে এর কার্যকারিতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিক মহলে উঠেছে, নগরবাসীর মধ্যে উঠেছে। কিন্তু এইটা এখনও তারা ফয়সালা করতে পারল না কেন?’
এ সময় তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত ও নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। এছাড়া গুজব প্রতিরোধে আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কঠোরভাবে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধও জানান মোহাম্মদ নাসিম।
১৪ দলের পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের উদ্দেশে নাসিম বলেন, ‘উনি এখনও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকেন। আপনি একটা ওভারসাইড কমিটি করেন। কমিটিতে সাংবাদিকদের রাখেন, বিশেষজ্ঞদের রাখেন। প্রয়োজনে আইনশৃংখলা বাহিনী এমনকি সেনাবাহিনীর লোককে রাখেন। আমরা যদি জঙ্গি দমন করতে পারি, মশা নিধন করতে পারব না, এটা তো আশ্চার্য ব্যাপার? জঙ্গির চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গেল এরা? আশ্চার্য লাগে আমার কাছে! এই মশক বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য একটি সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ডেঙ্গু মশা এবং গুজবে আমরা সবাই কিছুটা বিব্রত। তবে সরকার এবং প্রশাসন সতর্ক ও সজাগ আছে। সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু মশার সঙ্গে কোন বিভেদ বা রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নাই। তাই ডেঙ্গু মশা নিয়ে রাজনীতির জিলাপির প্যাঁচ কষা বন্ধ করুন।’
গুজবের তীর দিয়ে সরকারকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইনু বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, গত দুই মাসে ৮০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২২ হাজারেরও বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটা বাচ্চাও নিখোঁজ হয়নি। একটা প্রমাণ যদি কেউ দিতে পারেন, আমরা রাজনীতি ছেড়ে চলে যাব। সুতরাং গুজব ছড়াবেন না। মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। কিন্তু প্রিয়া সাহার কামড়ে সাম্প্রদায়িক জ্বর বাংলাদেশে হবে না।’
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এডিস মশার উৎসস্থল নিয়ে বলেন, ‘এডিশ মশা ময়লা পানিতে বাস করে না। এরা পরিষ্কার পানিতে বাস করে। আমাদের অনেকের ঘরে ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনার আছে। ফ্রিজের তলায় একটি ট্রে থাকে। সেখানে অত্যন্ত পরিষ্কার পানি থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পানি শুকিয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পানি শুকায় না। সেখান থেকেও কিন্তু মশা জন্ম নিতে পারে। ’
তাই সরকার ও জোটগতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি মশক নিধন কার্যক্রমকে বেগবান করার আহ্বান জানান সাবেক এই মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে একটি তথ্যসেল গঠনের আহ্বান জানান। এছাড়া তথ্যগত বিভ্রান্তি এড়ানোর লক্ষ্যে সেখানে থেকে প্রতিদিন ডেঙ্গু সম্পর্কিত তথ্যগুলো সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে অবহিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেন, ‘গণমাধ্যমে বেড়িয়েছে মশা নিধন যে ওষুধ ব্যবহার করছে সেটার কার্যকারিতা ছিল না বলেই এত ব্যাপকহারে ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। কারা এই নিম্নমানের ওষুধ এনেছে তাদের জবাবদিহিতার জায়গা ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এটা খুব জরুরি।’
গুজব রটনাকারীদের দ্রত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে- এমন গুজব রটিয়ে গ্রামে হামলা হতে। কিন্তু সেই মামলার এখনও সুরাহা হয়নি। এই ধরনের গুজব, যা আমাদের সামাজিক নিরাপত্তাকে ব্যহত করে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় সেগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে। আর এর জন্য প্রচলিত বিচার বা আইন নয়, বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এদের বিচার করতে হবে। বিচার যদি না হয় তাহলে এই গুজব বন্ধ করা যাবে না। ’
১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ, নির্মল রোজারিও, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি আব্দুস সবুর, বুয়েটের সাবেক প্রোভিসি হাবিবুর রহমান প্রমুখ।