Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেমিট্যান্সে প্রণোদনা নিয়ে জটিলতায় বাংলাদেশ ব্যাংক


৩০ জুলাই ২০১৯ ১৩:২১

ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় ২ শতাংশ প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মূলত বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে এবং হুন্ডি ব্যবসা নিরুৎসাহিত করতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে প্রণোদনা কারা, কিভাবে পাবেন তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি নির্ধারকরা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে একটি নীতিমালা করছে। এটি চূড়ান্ত হলে প্রণোদনা দেওয়া শুরু হবে। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে কতদিন লাগবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২ শতাংশ প্রণোদনা কোন ফরম্যাটে দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। এই টাকাটা কি প্রবাসী পরিবারের ব্যাংক হিসাবে দিয়ে দেওয়া হবে নাকি অন্য কোনোভাবে দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করতে অনেক স্ক্রুটিনি করতে হবে। এরইমধ্যে এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে কথা বলছি। তবে বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অনেকে ব্যাংকের মাধ্যমে বৈধভাবে প্রবাসে যান, আবার অনেকে অবৈধভাবেও যান। এমনও হয় অনেকে এক কোম্পানির জন্য গিয়ে অন্য কোনো কোম্পানিতে কাজ করছেন। আবার দেখা যায় মাসে ইনকাম করছেন ১০ হাজার টাকা বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে মাসে পাঠাচ্ছেন ১ লাখ টাকা। ফলে সব কিছু একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানই কেবল প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু এই প্রণোদনা দেওয়ার অভিজ্ঞতা ভালো না। প্রবাসীদের প্রণোদনা দিতে গিয়ে পাকিস্তান সরকারকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এমনও হচ্ছে প্রণোদনার আশায় দেশের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। পরে সে টাকা পুনরায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে এনে প্রণোদনা নিচ্ছে। বাংলাদেশেও যাতে প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয় সেদিকে নজর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। এই সুযোগের অপব্যবহারও হতে পারে। এমনও হতে পারে একজন বেতন পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা কিন্তু প্রণোদনার আশায় ২ লাখ করে টাকা পাঠাচ্ছেন। সুতরাং বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রণোদনার টাকা কিভাবে দেওয়া হবে এবং প্রকৃত প্রবাসীদের মাঝে এই টাকা সঠিকভাবে পৌঁছানো কঠিন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা করছে। যদিও তা বাস্তবায়ন করতে কয়েক মাস লেগে যাবে।

এদিকে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সের ওপর দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার কথা রয়েছে। নীতিমালা না হওয়ায় এটি কার্যকর করতে পারেনি সরকার। আমাদের সিস্টেম আপডেট করতে আরো দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।’

তিনি বলেন, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তারা প্রত্যেককে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এক্ষেত্রে কোনো ট্যাক্স বা সার্ভিস চার্জ কাটা হবে না। কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে ১০২ টাকা পাবেন।

উল্লেখ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (জুলাই=১৮-জুন-১৯) প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো যথাক্রমে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।

২ শতাংশ প্রণোদনা রেমিট্যান্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর