Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মা’কে মারধর করার জেরেই বাবাকে হত্যা করে সন্তানরা


৩১ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫২

ঢাকা: মা’কে মারধর করার জেরেই ক্ষুব্ধ হয়ে দুই ছেলে-মেয়ে মিলে বাবাকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে। বাবাকে হত্যার পর তা ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিত খুনসহ ডাকাতির ঘটনা সাজিয়েছিলেন সন্তানরা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ২ সন্তানকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতার হওয়া দুই সন্তান হলেন- ছেলে শামীম হাসান (২২) ও মেয়ে মহসিনা আফরোজ প্রীতি (২৫)। আর নিহত বাবা হলেন মহিবুল্লাহ (৬৫)। মা শাহিনা বেগম (৬০) পক্ষাঘাতগ্রস্ত, তার চলাফেরার ক্ষমতা নেই।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৯ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার কোনাপাড়া মোমেনবাগ সালাহউদ্দিন আহমেদ আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ১০/সি, বাড়িতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাযহারুল ইসলাম কাজল সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওসি বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে ছেলে-মেয়ে মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মহিবুল্লাহর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে শামীম ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং প্রীতি কবি নজরুল কলেজে পড়ছেন। সোমবার সকাল ৬টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ মোমেনবাগের ওই বাসা থেকে মহিবুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠায়।’

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেমেয়েরা বলেছে তাদের বাবা প্রায়ই অসুস্থ মাকে মারতেন। ঘটনার রাতেও মারধর করার সময় তারা বাধা দিতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে প্রীতি সিরামিকের মগ দিয়ে মাথায় আঘাত করলে মহিবুল্লাহ লুটিয়ে পড়েন। এরপর শামীম গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা তাকে করে। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করার পর তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুনসহ ডাকাতির ঘটনাটি ছিল সাজানো। বাসায় গিয়ে দেখা যায়, রুমের খাটের ওপর মহিবুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির লাশ পড়ে ছিল। লাশের মাথায় আঘাত ছিল ও বিছানায় রক্ত জমাট বেঁধে ছিল এবং বাসার কাপড়চোপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে ছিল। ঘটনাটি দেখার পর আমরা মৃত মহিবুল্লাহর ছেলে শামীম হাসান ও মেয়ে মহসিনা আফরোজ প্রীতি এবং মহিবুল্লাহর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। তারা ডাকাতির ঘটনা বলে এবং ডাকাতরা তাদের বাবাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশকে জানায়। যেহেতু খুনসহ ডাকাতি তাই সম্ভাব্য সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তকালে তাদের দেওয়া তথ্যের মধ্যে আমাদের সন্দেহ হলে আমরা তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এমন কিছু তথ্য পাই, যে তথ্যের সঙ্গে মহিবুল্লাহর ছেলে ও মেয়ের প্রদত্ত তথ্যের অমিল রয়েছে। তখন আমরা তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্য শামীম ও প্রীতির কাছে প্রকাশ করলে, তারা বুঝতে পারে আমরা সত্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি।’

বাবাকে হত্যা, ছেলে ও মেয়ে গ্রেফতার

এরপর তারা পুলিশকে জানায়, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে যে যার যার রুমে শুয়ে পড়ছিল। এমন সময় বাবা তার মাকে মারধর শুরু করেন। সে সময় পাশের ঘর থেকে মেয়ে প্রীতি এসে বাবা মহিবুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করে কেন মাকে মারছেন? প্রতিবাদ করায় প্রীতিকে মারধর করেন মহিবুল্লাহ। তখন তার ছেলে শামীম আসে। ছোটবেলা থেকে শামীম দেখেছে বাবা তাদেরসহ মাকে মারধর এবং গালাগালি করে। এ কারণে বাবার প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা ও দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ক্ষোভ ছিল। এই ক্ষোভ ও ঘৃণার কারণে শামীম তার বাবার গলা চেপে ধরে ও প্রীতি পাশে থাকা গ্লাসের তৈরি ভারি মগ দিয়ে বাবা মহিবুল্লাহর মাথায় আঘাত করলে তিনি বিছানায় ঢলে পড়েন। এর পরপরই বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আলমারি থেকে রশি এনে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়।

ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আশপাশের ভাড়াটিয়া প্রতিবেশীদের বলে তাদের বাসায় ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা তার বাবাকে খুন করেছে।

এ ঘটনায় মহিবুল্লাহর ভাই যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

ছেলে-মেয়ে বাবাকে হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর