সমস্যায় জর্জরিত চবির হল লাইব্রেরিগুলো, বিমুখ শিক্ষার্থীরা
৩১ জুলাই ২০১৯ ০৯:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নানান সংকটে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আবাসিক হলের লাইব্রেরিগুলো। এগুলোর রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা। নেই খুব বেশি আধুনিক সংস্করণের বই। এছাড়া, লাইব্রেরিগুলোতে রয়েছে পড়াশোনার পরিবেশের অভাবও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী, আলাওল, এ এফ রহমান হলের লাইব্রেরি থাকলেও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বইয়ের সংকট। অন্যদিকে শাহজালাল হলের লাইব্রেরির একপাশে নেই দেয়াল, লাইব্রেরিটি ডাইনিং এর পাশে হওয়ায় সবসময় কোলাহল পূর্ণ থাকে। ফলে পড়াশোনা ব্যাঘাত ঘটে শিক্ষার্থীদের। আমানত হলের লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ১২০ কাছাকাছি। দুই তিন বছর ধরে বই দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও লাইব্রেরিতে পরিচ্ছন্নতারও কাজও ঠিকমতো করা হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউট ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক দুটি মাস্টারদা সূর্যসেন আবাসিক হলে নেই লাইব্রেরি। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ডিপার্টমেন্টের লাইব্রেরি, সেমিনার ব্যবহার করছেন।
বেগম খালেদা জিয়া, শামসুন নাহার, প্রীতিলতা হলের লাইব্রেরিগুলোত নেই আধুনিক সংস্করণের বই। সময়মত লাইব্রেরিয়ানকে পাওয়া না যায় এবং যে বইগুলো আছে সেগুলো পুরাতন। যার ফলে একাডেমিক বই ব্যতীত প্রয়োজনীয় বই পাওয়া কঠিন ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শহীদ আব্দুর রব হল লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ বলা যায়। যেটিতে রয়েছে ১০০০ এর অধিক বই। গল্প, উপন্যাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই রয়েছে ৫০০ এর অধিক।
এসব বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহজালাল হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, হলের লাইব্রেরিটা কাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। একপাশে দেওয়াল নেই। একদম ডাইনিং এর পাশে। যার ফলে কোলাহলপূর্ণ থাকে। পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। প্রায় সময় লাইব্রেরিয়ানকে পাওয়া যায় না। রাত দশটার আগে লাইব্রেরি বন্ধ করে দেয়। অধিকাংশ ছাত্র রাতে টিউশন শেষ করে রাতের ট্রেনে ফিরে। লাইব্রেরিতে পড়াশোনার সুযোগ পায়না।
একই কথা বললেন এফ রহমান হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, হলের যে বইগুলো আছে পুরাতন। নতুন কোন বই নেই।
অন্যদিকে শাহ আমানত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, হলের লাইব্রেরিতে নানাধরনের সমস্যা রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বই নাই। পড়াশোনার পরিবেশ একদম প্রতিকূলে। লাইব্রেরিয়ানকে সবসময় পাওয়া গেলেও পড়াশোনার পরিবেশ দিতে পারে না। লাইব্রেরিতে বসার জায়গা নাই। অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতার কারণে পড়াশোনার পরিবেশ একদম প্রতিকূলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রীতিলতা হলের আবাসিক ছাত্রী সারাবাংলাকে বলেন, হলের লাইব্রেরিটা সমৃদ্ধ নয়। যে বইগুলো আছে খুবই পুরাতন। আধুনিক সংস্করণের কোনো বই নেই। যার ফলে প্রয়োজনীয় বই পাওয়া যায় না আর লাইব্রেরিয়ানকে প্রায় সময় পাওয়া যায় না। হলের যে লাইব্রেরি আছে শিক্ষার্থীরা হয়তো ভুলতে বসেছে।
শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মু. গেলাম কুবীর বলেন, হলের সমস্যা নিয়ে আসলে আমি এখনো অভিযোগ পাইনি। ছাত্ররা যদি অভিযোগ দেয় অবশ্যই হলের লাইব্রেরির সমস্যা সমাধান করা হবে।
শামসুর নাহার হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা আঁখি সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের হলের লাইব্রেরিতে পড়াশুনার পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক বই আছে। বঙ্গবন্ধু বই মেলা থেকে এবার লাইব্রেরির জন্য ২৬টির অধিক মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা ও ইতিহাসভিত্তিক বই কিনে নেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকে। তাহলে শিগগিরই সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. খালেদ মিসবাহুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, সূর্যসেন হলটি হোস্টেল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। হল হিসেবে নয়। হোস্টেল হিসেবে যাত্রা শুরু করছে তাই ওভাবে লাইব্রেরির জন্য কক্ষ নির্ধারণ করা হয়নি। এখন ছাত্ররা দাবি করছে হলে লাইব্রেরি খুবই প্রয়োজন। গতকাল এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে কিভাবে লাইব্রেরি করা যায় সেটা অবশ্যই চেষ্টা করব।
সারাবাংলা/সিসি/এনএইচ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চবি লাইব্রেরি শহীদ আব্দুর রব হল লাইব্রেরি শাহজালাল হল