‘তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির সমাধান সহজে হবে না’
৩১ জুলাই ২০১৯ ২০:২৭
ঢাকা: ‘তিস্তা নদীর পানিবণ্টন একটি বিশাল সমস্যা। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে থাকা এই সমস্যা সহজে সমাধান হবে না। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বুধবার (৩১ জুলাই) ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি ও কিছু প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন। গবেষণা এবং পরামর্শকধর্মী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সেমিনারটি ঢাকার সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বাংলা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এবং আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া শহীদ পরিবারের সন্তান চিকিৎসক নুজহাত চৌধুরী, ভারতের অরিন্দম মুখার্জী, সর্বজিৎ চক্রবর্তী ও মানষ ঘোষ সেমিনারে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘যারা বলেন খুব তাড়াতাড়ি তিস্তার পানিচুক্তি সমাধান হয়ে যাবে, তাদেরকে আগে নদী বিষয়টি বুঝতে হবে। ইংরেজি রিভার এবং বাংলা শব্দ নদী এক বিষয় নয়। প্রবাহমান জলরাশিতে আত্মা প্রাণ এবং শক্তি থাকলেই নদী হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে দ্বিমত পোষণ করেন তা এক অর্থে ঠিক আছে। কেননা তিস্তার উৎপত্তি সিকিম থেকে। সিকিম থেকে পানি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু এই জলপ্রবাহকে পশ্চিমবঙ্গে আসার আগেই সিকিমে প্রায় ২০টি বাঁধ অতিক্রম করতে হয়। এতে করে পশ্চিমবঙ্গে আসার পর তেমন পানি থাকে না। তাই এ বিষয়ে সমাধান করতে হলে মূল জায়গাটি বুঝতে হবে, সেইভাবে কাজ করতে হবে। এখানে মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।’
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুটি উপায়ে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক আমলাতান্ত্রিকভাবে এবং দুই রাজনৈতিকভাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি খুবই শক্তিশালী। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তাই বিজেপি চাইলে রাজনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব।’
বাংলা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এবং আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্তে হত্যা, ভিসা প্রক্রিয়া জটিলতা এবং রোহিঙ্গা এই চারটি বিষয়কে দুই দেশের মধ্যে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এবং এ বিষয়ে ভারতের কাছে সমাধান প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ। কিন্তু তিস্তার পানির হিস্যা সংক্রান্ত সমস্যাটি আজও রয়েছে অমীমাংসিত। ভারতের বিগত সরকারের সময়ে তিস্তার পানির হিস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাধা কিংবা চাপের মুখে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টির সমাধান করতে পারেননি বলে আমরা অবগত ছিলাম। ’
আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, ‘ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে দেখা গেছে, জনসংখ্যা বিবেচনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৪৫ শতাংশ লোক মোদি সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে। এই বিবেচনায় বিগত দিনের তুলনায় তিস্তার পানির হিসাব সংক্রান্ত সমাধানের বিষয়টা সহজ হয়েছে- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলা ফাউন্ডেশন মনে করে, গোটা পৃথিবীর রাজনৈতিক দৃশ্যপট যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তাতে ভারত বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একের প্রতি অন্যের আরো শ্রদ্ধাশীল এবং আন্তরিক হওয়া উচিত।’