নতুন চেয়ারম্যান যোগ দেননি, আন্দোলনে যাচ্ছে বিআরটিসি শ্রমিকরা
১ আগস্ট ২০১৯ ০০:০৫
ঢাকা: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) নতুন চেয়ারম্যান রহমতুল্লাহ মো. দস্তগীর এখনো কাজে যোগ দেননি। বদলি আদেশের ১০ দিন পরও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়া। বিআরটিসির চালক-শ্রমিকদের অভিযাগ, চেয়ারম্যান পদে থাকতে তিনি তদবির করছেন।
গত ২১ জুলাই ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়াকে সরিয়ে বিদুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমতুল্লাহ মোহাম্মদ দস্তগীরকে বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ফরিদকে বদলি করা হয় আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার অধিদফতরে। বদলি আদেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দ্রুত নতুন জায়গায় যোগ দিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই আদেশের পর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও নতুন চেয়ারম্যান যোগ দেননি বিআরটিসিতে। দায়িত্ব পালন করেছেন পুরনো চেয়ারম্যানই। এ অবস্থায় বিআরটিসির বিক্ষুব্ধ চালক-শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের একটি অংশ চেয়ারম্যানকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে আবারও আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে।
চালক-শ্রমিক-কর্মকর্তাদের দাবি, চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়া ভারত থেকে নিম্ন মানের বাস আমদানি ও ডিপোতে বাস বরাদ্দে দুর্নীতি করেছেন। তার সঙ্গী হয়ে এসব কাজ তদারকি করেছেন বিআরটিসির ডিজিএম (অপারেশন) মনিরুজ্জামান বাবু। তার অধীনে ঢাকায় চারটি বাস ডিপো ও চট্টগ্রামে একটি ট্রাক ডিপো রয়েছে। এসব ডিপোর বাস অবৈধ প্রক্রিয়ায় বহিরাগতদের হাতে টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব বাসের আয় নিচ্ছে বহিরাগতরা। ওই আয়ের ভাগ মনিরুজ্জামান বাবু নিজেও পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগ তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় বিআরটিসির চালক-শ্রমিকরা। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করা হয় চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদকে। তার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয় দস্তগীরকে।
জানতে চাইলে বিআরটিসি’র নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রহমতুল্লাহ মো. দস্তগীর সারাবাংলাকে জানান, তিনি সরকারি প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে ফিরে এসে বিআরটিসিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিআরটিসিতে শ্রমিক-চালকদের বেতন-ভাতা ও চলমান আন্দোলন সম্পর্কে তিনি অবগত নন জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ফিরে এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন তিনি।
এদিকে, ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়া তার নতুন কর্মস্থল আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার অধিদফতরে যোগ না দেওয়ায় সেখানকার মহাপরিচালক হিসেবে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন দিলীপ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘বিআরটিসি চেয়ারম্যান এখানো যোগ দেননি। তিনি এসে যোগ দিলেই আমি চলে যাব।’
দিলীপ জানান, তিনি নিজেও একটি প্রশিক্ষণে চীন যাচ্ছেন। আগামী ১২ আগস্ট চীন থেকে ফিরে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন।
এদিকে, বিআরটিসিতে চেয়ারম্যান ফরিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু বিভিন্ন ডিপো ম্যানেজারকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন, ফরিদ আহমেদ বদলি হবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিপো ম্যানেজার জানান, সাধারণত মাসের ২০ তারিখের পরে সমন্বয় সভা ডাকা হলেও এবার মাসের ৭ তারিখেই এই সভা ডাকা হয়েছে। সভায় যোগ দিতে সারাদেশ থেকে ডিপো ম্যানেজারদের ঢাকায় আসতে হবে। অথচ ঠিক ওই সময়ই চলবে ঈদযাত্রা। ফলে এই সমন্বয় সভার কারণে ঈদযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। একই সময়ে চালক-শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও দেওয়ার কথা রয়েছে। সেটা পরিশোধ করা না হলে ডিপোগুলোতে আন্দোলন শুরু হতে পারে বলেও আভাস দেন ডিপো ম্যানেজাররা।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, অবৈধভাবে ডিপো ম্যানেজারের মাধ্যমে বাসের ইজারাদারের টাকা আদায়ে এই সভা আয়োজন করা হয়। এই সভায় যোগ দিতে আসার সময় ডিপো ম্যানেজারদের টাকা নিয়ে আসতে হয়। ওই সময় বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালালে প্রচুর টাকা বের হয়ে আসবে।
এদিকে, ঢাকার ডিপোগুলোতে বিআরটিসির বেতন না পাওয়া চালক-শ্রমিকরাও একই সময় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সারাদেশের ডিপোগুলোতে ছয় থেকে ১০ মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। ঢাকার ভেতরে কেবল জোয়ার সাহারা ডিপোতেই ১১ মাসের বেতন বকেয়া। এছাড়া ঢাকার আরও পাঁচ ডিপোর বকেয়া ছয় থেকে ১০ মাস।
এর আগে, জোয়ার সাহারা ডিপোতে আন্দোলন করায় প্রায় ৪০ জন চালককে বদলি করেছিলেন চেয়ারম্যান। এদের মধ্যে মফিজুর রহমান নামে একজনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল।
মফিজুর রহমান জানানের অভিযোগ, বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করায় চেয়ারম্যান তাকে চাকুরিচ্যুত করেছেন। চেয়ারম্যান চালকদের বদলি ও চাকুরিচ্যুত করে ডিপোতে বাস বসিয়ে রেখেছেন। যে কারণে বেতন হয় না ডিপোতে। এখনই বিআরটিসির জোয়ার সাহারা ডিপোতে অর্ধশত গাড়ি বসে আসে।
এদিকে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া লিখিত অভিযোগ ঘেঁটে দেখা গেছে, ভারতীয় বাস আনতে ‘প্রি ইনস্পেকশনে’র নামে একাধিক বিলাস সফর করেন চেয়ারম্যান। অথচ ওই বাসগুলো সড়কে নামতেই ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়া শুরু হয়। এছাড়া বাসগুলোর বডি শিট খুবই হালকা, যা দ্রুত বেঁকে যাচ্ছে ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বাস আনতে তারা ভারত গেলেও দেশে আসা বাসগুলোতে স্পেসিফিকেশন মানা হয়নি। এমনকি বাসগুলোর ওজনও কম— ডিপোতে এমন ত্রুটিও ধরা পড়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়াকে পাওয়া যায়নি। বিআরটিসি’র পরিচালক প্রশাসন হামিদুল ইসলামও ফোন ধরেননি।