একদিকে ডেঙ্গু অন্যদিকে বন্যা, ১৩৩ জনের মৃত্যু
১ আগস্ট ২০১৯ ০৮:১৯
ঢাকা: দেশে একদিকে যখন বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তখন আরেকদিকে বন্যা কবলিত অঞ্চলে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন রকমের সমস্যা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ১৪ জন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যা কবলিত অঞ্চলে নানা কারণে গত ২১ দিনে মারা গেছেন ১১৯ জন।
বুধবার (৩১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে দেওয়া দু’টি আলাদা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে (৩০ জুলাই) সকাল ৮ থেকে (৩১ জুলাই) সকাল ৮ পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টার হিসাব তুলে ধরা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে দেওয়া জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৪৭৭ জন। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯২৮ জন। আর ঢাকা শহর বাদে ঢাকা বিভাগীয় এলাকায় রোগীর সংখ্যা ১১২ জন। ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৫৪৯ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগীয় এলাকার ঢাকা শহরের আশেপাশের এলাকাগুলোতে চলতি বছরে ১৭৪ জন, গাজীপুরে ১২০ জন, মুন্সীগঞ্জে ২৭ জন, কিশোরগঞ্জে ১০৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৪ জন, গোপালগঞ্জে ১০ জন, মাদারীপুরে ২৪ জন, মানিকগঞ্জে ৩২ জন, নরসিংদীতে ২৬ জন, রাজবাড়ীতে ৩৭জন, শরীয়তপুরে ১২ জন, টাঙ্গাইলে ৫১ জন, ফরিদপুরে ২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ২০৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
এছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগের আওতায় থাকা বিভিন্ন জেলা শহরে চলতি বছরে ২৫৪ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ২০৩ জন, শেরপুরে ১৪ জন, জামালপুরে ৪৭ জন রোগী বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১৮১ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে ভর্তি হয়েছেন ৬০৯ জন। এর মাঝে চট্টগ্রামে ২২৬ জন, ফেনীতে ৮৫ জন, কুমিল্লায় ৬৫ জন, চাঁদপুরে ১০২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬ জন, নোয়াখালীতে ৪১ জন, কক্সবাজারে ১৭ জন, লক্ষ্মীপুরে ৩৩ জন, খাগড়াছড়িতে ১০ জন, রাঙ্গামাটিতে ৩ জন, বান্দরবানে ১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এইসব জেলা শহরে বর্তমানে ১৫৭ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
খুলনা বিভাগেও বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি বছরে এই বিভাগীয় শহরে সর্বমোট ৪৩৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ২৬১ জন। প্রতিবেদনে জানানো হয় খুলনায় ১৮০ জন, কুষ্টিয়ায় ৭২ জন, মাগুরায় ৮ জন, নড়াইলে ১০ জন, যশোরে ৯৮ জন, ঝিনাইদহে ২৬ জন,বাগেরহাটে ৮ জন, সাতক্ষীরায় ২৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৮ জন, মেহেরপুরে ৩ জন রোগী বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগে চলতি বছরে ২৯৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে এই বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। রাজশাহী শহরে ৮১ জন, বগুড়ায় ১১৬জন,পাবনায় ৪৯ জন,সিরাজগঞ্জে ১৯ জন,নওগাঁয় ১০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৮ জন,নাটোরে ৫ জন, জয়পুরহাটে ১ জন রোগী বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রংপুর বিভাগে চলতি বছরে ১৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে রংপুরে ৭৯ জন, লালমনিরহাটে ৩ জন, কুড়িগ্রামে ৫ জন, গাইবান্ধা ৬ জন, নীলফামারীতে ৮ জন, দিনাজপুরে ৩৩ জন, পঞ্চগড়ে ২ জন, ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হিসেব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া দৈনিক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে দেখা যায় চলতি বছরে বরিশাল বিভাগে ১২৮ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বরিশালে ১০১ জন, পটুয়াখালীতে ১৬ জন, ভোলায় ৭ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, ঝালকাঠিতে ১ জন রোগী বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সিলেটে বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৩৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট শহরে ৫৮ জন, সুনামগঞ্জে ৭ জন, হবিগঞ্জে ১৩ জন, মৌলভীবাজারে ২৬ জন রোগী বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায় চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১১৯ জন। এর মধ্যে নেত্রকোণায় ১৯ জন, চট্টগ্রামে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন, বগুড়ায় ৮ জন, গাইবান্ধায় ২০ জন, লালমনিরহাটে ৪ জন, নীলফামারীতে ২ জন, সুনামগঞ্জে ৫ জন, কুড়িগ্রামে ৪ জন, জামালপুরে ৩৬ জন, শেরপুরে ২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জন, টাঙ্গাইলে ১১ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন, ফরিদপুরে ১ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন রোগী মারা গেছেন।
এর মধ্যে মাতৃত্বজনিত কারণে একজন, বজ্রপাতে সাতজন, সাপের কামড়ে ১০ জন মারা গেছেন। এছাড়াও পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৯৮ জন। অন্যান্য কারণে মারা গেছে আরও ৩ জন। তবে এবার বন্যায় এখন পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যায় ১৮ হাজার ৬৮ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৮ টি জেলার ২২৮ টি উপজেলায় মোট ২ হাজার ৪৬২টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছেন। ইতোমধ্যেই ৬৮ উপজেলাকে ‘দুর্গত উপজেলা’ হিসেবে দেখানো হয়েছে রিপোর্টটিতে। এর মধ্যে ২ হাজার ১১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩০২টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এসব এলাকায় ১ হাজার ৩০৭টি আশ্রয় কেন্দ্র আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আখতার বলেন, ‘এবারের বন্যা পরবর্তী সময়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।’