Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমনায় এডিস মশার উপদ্রব, ঝুঁকিতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল-মন্ত্রিপাড়া


১ আগস্ট ২০১৯ ১০:১৩

ঢাকা: বর্ষায় ক্রমেই বাড়ছে মশার উপদ্রব। আসছে দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। এরপরও নেই মশা নিধনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ। রাজধানীর রমনা পার্কের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে ডেঙ্গু রোগবাহিত এডিস মশার আবাস্থল। ফলে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন পার্কের ভেতরের গ্রিন হাউজ কর্মচারী আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। এর পাশাপাশি ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে ওই এলাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এবং মন্ত্রিপাড়ার বাসিন্দারাও।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে ওই আবাসিক এলাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে দুই শিশুসহ পাঁচ জন। সেইসঙ্গে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ছে পার্কের ভেতরে অবস্থিত ঢাকা ক্লাব ও পাশের মন্ত্রিপাড়া এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসহ আশপাশের এলাকায়। এমনকি ডেঙ্গু আক্রান্তের শঙ্কা রয়েছে পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদেরও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থী এবং ওই এলাকায় বসবাসকারীরা।

গ্রিন হাউজ কর্মচারী আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সর্বশেষ কবে সেখানে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা কেউ জানে না। তাদের দাবি, গত এক বছরে কোনো মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেনি তারা। এমনকি মশক কর্মীরা এই জায়গাটি চেনে কিনা সে বিষয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাদের।

বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে পার্কটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এর ভেতরে নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলতে স্থাপিত স্টিলের বিনের ভেতরে মশার বসবাস। সেইসঙ্গে পার্কের ভেতরের অংশে কাকরাইল মসজিদের ট্যাংকের পানি উপচে পড়ে যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে সেখানেও এডিস মশার লার্ভা দেখা গেছে। এছাড়া পার্কের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে ভেঙে পড়া নারিকেল গাছের ডগা, সেখানেও পানি স্বচ্ছ পানি জমেছে। এই পানিতেও জন্ম নিতে পারে এডিসের লার্ভা।

পার্কটির পশ্চিম পাশে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (শেরাটন) পিছনের অংশেও দেখা যায়, ড্রেনগুলোতে ভনভন করে উড়ছে মশা। পাশেই গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতরের কর্মচারীদের আবাসস্থল গ্রিন হাউজ আবাসিক এলাকা। সেখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। চারদিকে জমে আছে পানি। দিনের বেলাতেও মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ সেখানকার মানুষজন।

গ্রিন হাউজ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ১৪ জুলাই আমার সাড়ে চার বছরের বাচ্চা রেদওয়ান ইসলাম আদিল হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়। ওইদিনই কর্মচারী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। পরের দিন তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক সপ্তাহ ছিল। তবে বাসায় নিয়ে এলেও এখনও তার চিকিৎসা চলছে। ’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। তার ওপর এতোগুলো টাকা খরচ করতে হলো ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য। যেদিন আমার বাচ্চা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হইছে। তার পরের দিন আমিও আক্রান্ত হয়েছি। আজকেও পাশের বাসার জোবায়ের নামে আড়াই বছরের এক শিশুকেও ডেঙ্গু জ্বরের কারণে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।’

এ সময় অপর এক বাসিন্দা হাফিজা খাতুন বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগেও এখানকার একই পরিবারের দুজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা নিয়ে তারা গ্রামে চলে গেছে। এই কোনোদিন মশার ওষুধ ছিটাইতে দেখি নাই।’

সেখানে বসবাসকারী শহিদ নামের পিডব্লিউডি-এর এক কর্মচারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার নিজেরও তিনদিন ধরে জ্বর জ্বর লাগছে। তবে আরেকটু দেখতেছি। কাল-পরশু ডাক্তারের কাছে যামু। আমরা যে এখানে এতগুলা মানুষ বসবাস করি কেউ তা নজর দেয় না। শেষ কবে যে মশার ওষুধ ছিটাইছে সেইটা এখানকার কেউ বলতে পারবে না। আমি নিজেও বহুদিন হইছে মশার ওষুধ ছিটাইতে দেখি নাই। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো গরীব মানুষ ঝুঁকিতেই আছি। কিন্তু এটার কারণে তো পাশের শেরাটন হোটেলও ঝুঁকিতে। সেখানেও তো অনেক নামিদামি মানুষ আসে। কিন্তু হোটেলের পিছনেই মশার কারখানা।’

এদিকে রমনা পার্কের বিপরীত পাশে মন্ত্রিপাড়াতেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বাগানের বিভিন্ন স্থানে থাকা ফুলের টবসহ চারদিকে কংক্রিটের গর্তগুলোয় স্বচ্ছ পানি জমে আছে। ওই পানিতে মশা উড়তে দেখা গেছে।

সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যসহ একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, এখানে মশা আছে। কিন্তু এডিস মশা আছে কিনা তা জানি না। থাকলেও থাকতো পারে। তবে এখনও কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা জানা যায়নি।

এসব বিষয়ে জানতে রমনা পার্ক ও মন্ত্রিপাড়া কর্মচারী পরিচালনাকারী কর্মকর্তা মো. শামছু সারাবাংলাকে বলেন, ‘রমনা পার্কে ফগার মেশিন দিয়ে কখনই ওষুধ ছিটানো হয়নি। তবে স্প্রে দিয়ে মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিটানো হতো। বর্তমানে এডিস মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে রমনা পার্ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রমনা পার্ক ও গ্রিন হাউজে এডিস মশার কামড়ে পাঁচজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। যেহেতু রমনা পার্ক সংলগ্ন মন্ত্রিপাড়া ও ভিভিআইপিদের বাসস্থান, সেখানে এডিস মশা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কিন্তু কোথাও দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না, এমনটা হওয়ার কথা না। তবুও আপনি যেহেতু তথ্যটি দিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু পরিস্থিতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর