Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিনবছর লোকসানে থাকলে বেসিক ব্যাংকের শাখা বন্ধ


১ আগস্ট ২০১৯ ১৬:৪৬

ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, চলতি বছরসহ পরপর তিন বছর বেসিক ব্যাংকের যে সব শাখা লোকসানে থাকবে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সেখানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব আছাদুল ইসলাম, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ, এমডি রফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগের দুই বছর এবং চলতি বছরসহ পরপর তিন বছর বেসিক ব্যাংকের যে সব শাখা লাভ করবে না, সে শাখাগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। আগের দুইবছর মেনে নিলাম। সঙ্গে এই বছরও যদি একই শাখা টানা তৃতীয় লোকসান করে তাহলে শাখাটি বন্ধ করে দেব। এটি বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমার প্রথম সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে আমি ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। তারা এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক ছিল একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। এটি এভাবে ধবংস হতে পারে না। বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপশন হলো ব্যাংকটিকে ভালোভাবে অপারেশন করা। তা করতে না পারলে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭ সালে ব্যাংকটির লোকসান ছিল ৩৫৪ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে লোকসান হয় ৩৬০ কোটি টাকা। এই ব্যাংকে ৭২টি শাখায় দুই হাজার ১০০ কর্মকর্তার/কর্মচারীর কী কাজ আমি জানি না। এটিকে পুনর্গঠন করতে হবে। একদিকে বেতন বেশি অন্য ব্যাংকের চেয়ে দ্বিগুণ। এটি কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ এখানে অন্য সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি কাজ করা হয় না। তাহলে আপনারা কেন বেশি বেতন নিবেন? এটি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট বসে ঠিক করবে, আমি এ দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। বেতন সমন্বয় করা হলে প্রতিমাসে কিছু অর্থ বেঁচে যাবে, যার মাধ্যমে লোকমানের পরিমাণ কমে আসবে।’

বিজ্ঞাপন

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকটির লসের পরিমাণ ৩ হাজার ৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা সুযোগ দিয়েছি। বেসিক ব্যাংকের ৩৮০ জন ঋণ খেলাপি এই সুযোগ নিতে সাড়া দিয়েছে। তাদেরকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দিয়ে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১১ বছর সময় দেয়া হবে টাকাটা পরিশোধ করতে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করবো বেসিক ব্যাংকের সব ঋণ খেলাপিরা সরকারের এ সুযোগ নিতে এগিয়ে আসবেন। যারা এগিয়ে আসবে না তাদের তালিকা ধরে প্রত্যেকের পিছনে এজেন্সির লোক লাগিয়ে দেব। ঋণ না দিয়ে যাবেন কোথায়। কারো ঋণ মাফ করা যাবে না।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা চলছে। ঋণ বিতরণ অনিয়মে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার যোগসূত্র থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো কর্মকর্তা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ডকুমেন্টে ঋণ দিয়ে থাকেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ দেশ ছেড়েও পালাতে পারবে না। ঋণ নিয়ে কেউ বিপদে পড়েছে এমন ঘটনা হলে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু ঋণ নিয়ে ঋণের টাকায় যারা ফুর্তি করে বেড়াবে তাদের ধরা হবে।’

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংককে অস্থায়ীভাবে কিছু টাকা দেয়া হবে ব্যবসা করার জন্য।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকারি টাকা কেউ আত্মসাৎ করতে পারবে না। যারা বেসিক ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়েছেন তাদের অবশ্যই টাকা পরিশোধ করতে হবে।’

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা। এই টাকা উদ্ধার করতে সরকার কাজ করছে।’

বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নিয়ে আমরা প্রথমটি কাজটি করেছি বেসিক ব্যাংক থেকে কারা ঋণি নিয়েছিল তাদের চিহ্নিত করেছি। দ্বিতীয় কাজটি করেছি তাদের আইনি আওতায় আনার জন্য তাদের ঋন পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়াে হয়েছে।’।

তিনি বলেন, এক সময় বেসিক ব্যাংকের ৬৭ শতাংশ ঋণ খেলাটি হলেও তা কমিয়ে ৫১ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমানে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৫৯ শতাংশ।

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আলম বলেন, ‘দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট খেলাপি ঋণ পরিশোধে অনেকে রাজি হয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়ন হলে ৩ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা আসবে।’

অর্থমন্ত্রী টপ নিউজ বেসিক ব্যাংক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর