Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নোবেল একটি ভুল গানের ফ্যান!


২ আগস্ট ২০১৯ ১৪:২৩

নোবেল

এইটুকু একটা ছেলে! একুশ বছর বয়স। সবাই এ বয়সে সুকান্ত হবে তাতো নয়! ছেলেটি তার আবেগ, বা যতটুকু জ্ঞান প্রত্যক্ষ করেছে তা থেকেই একটা মন্তব্য করেছে৷ তাতে তার মুন্ডুপাত করার মতো কিছুই দেখি না৷ আমরা দীর্ঘসময় ধরে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলি। আবার আমরা নিজেরাই টুটি চেপে ধরি। আমরা আরেকজনের মতকে সম্মান দিই না। আরেকজনকে কটু কথা বলাতে আমাদের বিমলানন্দ। খাটো করাতেই শান্তি। নোবেলের গলার স্বকীয়তাকেও অস্বীকার করে গালি দিচ্ছেন কেউ।

নোবেল জাতীয় সংগীতের সাথে ব্যক্তিগত পছন্দের একটি তুলনা করেছেন। তবে কিছু মন্তব্য ছিল যা কোন জ্ঞানী লোক করত না। অপরিণত মস্তিষ্ক প্রসূত বলা যায়।

এসব মন্তব্যের যা শানে নুযুল তাতে নোবেলকে আমি দায় দিব না। নোবেল যে প্রজন্মে বড় হয়েছে সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের স্পর্ধা কেউ দেখান নি তাতো নয়। খোদ বিএনপির আমলে মুহিবুল্লাহ খান নামে এক ব্যক্তির ‘ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি’ শিরোনামের গান বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হয়েছিল। জাতীয় সংগীত হিসেবে গানটি বিএনপির পছন্দের তালিকায় ছিল! জেনারেল জিয়া তার আমলে তার উপদেষ্টা সৈয়দ আলী আহসানের কাছে জাতীয় সংগীত পালটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

রবি ঠাকুরের গান জাতীয় সংগীত হিসেবে অনুপযোগী—সে সময় বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস টেনে সবক লিখেছিল কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। আর, জামায়াতের নেতা গোলাম আজমের গুরু আবুল মনসুর আহমেদের রবীন্দ্র বিরোধী লেখা রেফারেন্স হিসেবে তাদের হাতে ছিলই। গোলাম আজম পাকিস্তান থেকে বিমানে ফিরে সরাসরি আবুল মনসুর আহমেদের বাসায় গিয়ে দোয়া নিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথকে হিন্দুয়ানী ও বাংলাদেশ বিরোধী কবি হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন আবুল মনসুর সাহেব। যুগে যুগে আবুল মনসুর আহমেদ এর ভূত বাঙালির শর্ষের মধ্যে বেঁচে ছিল ও আছে।

১৯৭৫ এর পর রবীন্দ্র ও হিন্দু বিরোধী জিকিরে অনেক মৌলবাদী আশেকান তৈরি হয়। এরশাদও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনে আগ্রহী ছিলেন। এই সরকারগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ভূত ছিল। একুশ বছর এ জাতি স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালিয়ানা নিয়ে প্রাণ খুলে আবেগ দেখাতে পারেনি। ঐ রুদ্ধ সময় সংস্কৃতি ছিল হিজাবে ঢাকা। মস্তিষ্ক ছিল পাগড়িতে ঢাকা।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসার পর এদেশে কিছু অদ্ভুত তরিকার নিরপেক্ষ লোক জন্মাতে থাকে। তখনো এ জাতি ৭৫-৯৬ এর দুই দশকের পাকিস্তানি সবক ভুলতে পারছিল না। তারা দুইদশকের শাসনের পতন মেনে নিতে পারছিল না।

দুই দশকে বিস্মৃত বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ হতে শুরু হলো। সুযোগ সন্ধানীরা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াকে টিকিয়ে রাখতে তার নাম জাতির পিতার পাশাপাশি উচ্চারণ করে যেত লাগলো। তারা এটার নাম দিলেন নিরপেক্ষতা।

খালেদা জিয়া নির্বাচনী ভাষণে জিয়ার নামে সাথে তার মতে ‘অনান্য জাতীয় নেতা শেখ মুজিব, ভাসানী’সহ অনেকের নাম নিতেন। দলীয় এই স্ট্যান্টবাজি বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের ধান্দাবাজিতে পরিণত হয়৷

এই স্ট্যান্টবাজিতে কিছু শিল্পীও যোগ দেয়। যেমন, একজন লিখে ফেললেন একটি গান, ‘বাংলাদেশ, তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুনে জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষণ’। পরের লাইনে তিনি লিখেন ‘তুমি ধানের মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন’।

বঙ্গবন্ধু জিয়াকে এক লাইনে এনে প্রিন্স মাহমুদ নামের এই সুরকার কথিত নিরপেক্ষতার জন্য বাহবা পেয়েছেন। বিএনপি সমর্থকদের ভাষায়, এটা চমৎকার নিরপেক্ষ গান। কিন্ত বিবেকবান লোক ক্ষুব্ধ হয়। কারণ, ‘জেনারেল’ জিয়া সংবিধান লঙ্ঘনকারী মিলিটারী ডিকটেটর। তার নাম কোনো ভাবেই বঙ্গবন্ধুর পাশে বসতে পারে না৷

আবার গানটি ভুল। জেনারেল জিয়া ধানের শীষে স্বপ্ন দেখেন নি৷ ধানের শীষ মাওলানা ভাসানীর প্রতীক। তিনি কৃষক নেতা ছিলেন৷ তিনি এই প্রতীকে আন্দোলন করেছেন। অসুস্থ ভাসানীকে দেখতে গিয়ে জিয়ার নজর পড়ে প্রতীকে। তিনি এটা ব্যবহার শুরু করেন৷ অসুস্থ ভাসানীর এই প্রতীক থাকা না থাকা নিয়ে ভাবনার সময় ছিল না। জীবন তার তখন শায়ান্নে।

এই গানে এরশাদ না থাকলেও এই গানের বাণিজ্যে প্রভাব পড়ত না। পড়লে অবশ্যই প্রিন্স মাহমুদ আরো নিখুঁত নিরপেক্ষ করতেন। এই গানটি অসৎ সময়ের। অসৎ নৈতিকতার। অসৎ বিপণনকারীর।

এভাবে তরুণ প্রজন্মকে শুদ্ধ অশুদ্ধের বিভ্রান্তিতে বড় করে তুলেছে কিছু বুদ্ধিজীবী, কিছু রাজনীতিবিদ, কিছু শিল্পী। নোবেল সেই প্রজন্মের বেড়ে উঠা তরুণ। হাজারো নোবেল মনে করে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা উচিৎ। হাজারো নোবেল এই গানটা শ্রদ্ধা করে কারণ এই গানে বঙ্গবন্ধুর পাশে জিয়ার নাম আছে। কারণ এই গান তাদের ভাষায় ‘নিরপেক্ষ’!

একটি ভুল সময়ে বেড়ে উঠা অল্প শিক্ষিত এক প্রজন্ম জাতির পিতা এবং জিয়াকে সমমানের মনে করে। দুটো নাম একসাথে উচ্চারণ করাকেই বিভ্রান্ত তরুণ জাতীয় ঐক্য মনে করে৷

নোবেলের বাকস্বাধীনতা অপরাধ হলে, এ গান লেখাও অপরাধ ছিল। এ গানে কিছু তরুণ ভুল চেতনায় তাড়িত হয়েছে।

মনোয়ার রুবেল monowarrubel@gmail.com

সারাবাংলা/পিএ

গান জাতীয় সঙ্গীত জেমস টপ নিউজ নোবেল মাঈনুল হাসান নোবেল সারেগামাপা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর